বরিশাল: বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষের সূত্র ধরে জুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফরচুন সুজ লিমিটেডের কারখানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা শ্রমিকদের ওপর গুলি করেছেন।
অপরদিকে শ্রমিকদের ছোড়া ইট-পাটকেলের আঘাতে কাউনিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান এবং পাঁচ আনসার সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুরে বরিশাল বিসিক কম্পাউন্ডে অবস্থিত কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। কারখানাটি বিপিএলে ফরচুন বরিশাল টিমের মালিক ও বিসিক শিল্পনগরী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমানের।
আন্দোলনকারী শ্রমিক নিপা বলেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কথা দিয়েছিল প্রতি মাসের ৮ তারিখের মধ্যে বেতন দেবে। কিন্তু তা না দিয়ে এক মাসের বেতন পরের মাসের ২৫ তারিখেরও পরে দেয়। আমরা ফরচুন সুজের কাছে দুই মাসের বেতন পাব। আজকে সেই বেতন চাইতে গেলে কোম্পানি দুই মাসের বেতন না দিয়ে ১৫ দিনের বেতন দিতে রাজি হয়। এতে কিছু শ্রমিক কারখানা থেকে বেড় হয়ে যেতে চাইলে আনসার সদস্যরা বাধা দেন। তারা শ্রমিকদের ধরে ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করেন। মারধরের এক পর্যায়ে গুলিও করেন আনসার সদস্যরা।
অন্য শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, মাসের ১০ তারিখ বেতন দেওয়ার কথা বলে আমাদের চাকরি দেওয়া হলেও তা মানা হয়নি কখনও। প্রথম দিকে মাসের ১৫ তারিখে বেতন দিত। সেখান থেকে যায় ২০ তারিখে। আর এ মাসে তো ২৩ তারিখ পার হলেও বেতন পায়নি কোনো শ্রমিকই। মাস শেষে এখন বলা হচ্ছে অর্ধেক বেতন নেওয়ার কথা, বাকি অর্ধেক আগামী মাসের ৩০ তারিখে দেওয়ার কথা বলছে।
শ্রমিকরা আরও বলেন, পেটের ক্ষুধায় চাকরিতে এসে দুই মাস শেষে যদি হাফ বেতন দেয় তাহলে কীভাবে ঘরভাড়া দেব, দোকানের বকেয়া পরিশোধ করব? তারা তো আমাদের মারবে। আর সেই টাকা চাইতে গিয়ে আমাদের মারধর করা হয়েছে, গুলি করা হয়েছে।
আন্দোলনকারী শ্রমিক ইউনুস বলেন, মাসের ২৩ তারিখ হলেও বেতনের খবর নেই। এখন বেতন চাইতে গিয়ে আমাদের ওপর গুলি চালানো হলো। ৪/৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। শ্রমিকদের যখন মারধর করে তখন ফরচুন সুজের মালিক পক্ষের লোকজন ঘটনাস্থলে ছিল। তারাই আনসারদের শিখিয়ে দিয়েছেন বেতন চাইলে গুলি করবি!
শ্রমিক নাসরিন বলেন, বেতন চেয়েছি, বেতন দেবে না। ভালো কথা, কিন্তু আমার শ্রমিক ভাইদের মারবে কেন? নিচতলায় গেটের কাছে সহকর্মীদের ওপর হামলার খবর শুনে ভেতরের বিভিন্ন তলা থেকে শ্রমিকরা বেরিয়ে আসতে চাইলেও প্রথমে মালিকপক্ষের লোকজন ও কর্মকর্তারা দেয়নি। তারা নানানভাবে আমাদের গালিগালাজ করেন। পরে সবাই জড়ো হয়ে কারখানার গেটে বিক্ষোভ ও মিছিল করেছি। তখন হয়তো অতি উৎসাহী কেউ কেউ কারখানায় ইট মেরে জানালার গ্লাস ভেঙেছে, শ্রমিকরা কোনো হামলার ঘটনা ঘটায়নি।
তবে ফরচুন সুজের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য (এপিসি) ইউসুফ আলী বলেন, শ্রমিকরা কারখানার কাছে বেতন পাবে। তারা আন্দোলনে নেমে প্রথমেই এসে অতর্কিতভাবে আমাদের আনসার সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। পুরো ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর চালিয়ে মোবাইল, টাকা পয়সা নিয়ে যায় শ্রমিকরা। পরে তারা ম্যাগাজিন রুমে হামলা চালাতে গেলে ওপরের নির্দেশক্রমে আমরা ফায়ার করেছি।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের হামলায় আমাদের ৫-৭ জন সদস্য আহত হয়েছেন, আমরা বাইরে গিয়ে কোনো গুলি করিনি। শ্রমিকরা ম্যাগাজিন রুমে হামলা করতে এলে আমরা উপরের নির্দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে ১০ রাউন্ড গুলি করি।
গুলিতে শ্রমিকরা হতাহত হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন ফরচুন সুজের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য ইউসুফ আলী।
এদিকে শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়ে কারখানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। এমনকি কারখানার ভেতরে কিছু হওয়ার খবরও তাদের জানা নেই বলে দাবি করেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি। এখন পর্যন্ত চারজন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিস্তারিত পরে জানাব।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২৪
এমএস/এমজেএফ