ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মাদারীপুরে সমাজসেবার দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভাতা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৩ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২৪
মাদারীপুরে সমাজসেবার দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভাতা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

মাদারীপুর: মাদারীপুরে প্রতিবন্ধীভাতা দুই সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা নিজেদের বিকাশ নম্বর দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভাতাভোগীরা জানেন না যে, সরকার থেকে প্রাপ্ত প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকায় তাদের নাম রয়েছে।

 

মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নে ঘটেছে এমন ঘটনা।  

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মাদারীপুর সদরের সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার বলেন,‘বিপদে ফেলতে চলতি মাসেই আমার মোবাইলফোন নম্বর এডিট করে তালিকায় দিয়েছে অফিসের কেউ। আমার কাছে বিকাশ স্টেটমেন্ট রয়েছে। আমি থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছি’ 

এদিকে ভুক্তভোগী একাধিক ভাতাভোগী জেলা সদর উপজেলার সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার এবং কালকিনি উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুপাই হাওলাদারের নামে মাদারীপুর সদর উপজেলা থেকে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়। তবে রুপাই হাওলাদার নিজেই বিষয়টি জানেন না। সম্প্রতি তিনি অফিসে গিয়ে জানতে পারেন, তার নামে ৫ কিস্তির ১২ হাজার ৭৫০ টাকা এবং গত দুই কিস্তির আরও ৫ হাজার ১০০ টাকা তার বিকাশ নম্বরে যাচ্ছে না। যে দুই বিকাশ নম্বরে রুপাইয়ের টাকা যাচ্ছে, তা হলো সদর উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেনের। বর্তমানেও তার নামের টাকা ০১৬******১১ এই নম্বরেই যাচ্ছে। অথচ নম্বরটি প্রকৃত ভাতাভোগীর নয়!

এছাড়া একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মামুন খান ও ছালমা বেগম দম্পতির বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়ে ফাতেমা আক্তারের নামে ২০২০-২১ অর্থ বছর থেকে নিয়মিতভাবে ০১৯******৩০ -এই নম্বরে টাকা গেলেও হঠাৎ গত তিন কিস্তির টাকা ওই নম্বরে আসেনি। পরে ভুক্তভোগীর মা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন, মেয়ের নামের টাকা বর্তমানে ০১৯******২৩ নম্বরে যাচ্ছে। বিকাশ নম্বর পরিবর্তনের জন্য ভাতাভোগী ও পরিবার কোনো আবেদন সমাজসেবা অফিসে করেননি বলে জানান। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ওই নম্বরটি সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেনের এক ঘনিষ্ঠজনের।

মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের ঘটকচর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর সরদার অভিযোগ করেন যে, অনেক আগে প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার জন্য মেম্বারের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি জানতে পারেন যে, তার নামে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়ন থেকে ২০২২-২৩ সালে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরে তিনি অফিসে গিয়ে জানতে পারেন, তার নামে প্রথম পাঁচ কিস্তির ১২ হাজার ৭৫০ টাকা ০১৩******৪৭ -এই নম্বরে দেওয়া হয়েছে এবং গত দুই কিস্তির ৫ হাজার ১০০ টাকা ০১৭******৯৪ -এই বিকাশ নম্বরে ঢুকেছে। অথচ ওই নম্বর দুটি ভাতাভোগী মিজানুর রহমানের নয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, নম্বরটি কালকিনি উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমানের।  

এছাড়া কালকিনি পৌর সভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগমের বয়স্ক ভাতার টাকাও এই নম্বরে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালকিনি উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান এবং সদর উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন ১৯৯৮ সালে ফিল্ড সুপারভাইজার হিসেবে সমাজসেবা অধিদপ্তরে যোগ দেন। যোগ দেওয়ার পর থেকেই তারা ঘুরে-ফিরে মাদারীপুরের বিভিন্ন উপজেলাতেই কর্মরত আছেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তারা একই সঙ্গে পদোন্নতি পেয়ে ফিল্ড সুপারভাইজার থেকে সহকারী সমাজসেবা অফিসার হিসেবে বিধি বহির্ভূতভাবে পূর্ববর্তী কার্যালয়েই পদায়ন পেয়েছেন।

ভুক্তভোগী রুপাই হাওলাদার বলেন,'আমাদের বিকাশ নম্বরের পরিবর্তে অন্য লোকের নম্বর দিয়ে তারা টাকা তুলে নেন। আমরা কোনো টাকা পাইনি। পরে আমরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। '

আমেনা বেগম নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন,'আমার বিকাশ নম্বরের জায়গা অন্য একজনের বিকাশ নম্বর। অথচ আমি আমার নম্বর পরিবর্তন করিনি। গত ৮-১০ মাস ধরে কোনো টাকা পাই না আমি। অফিসের লোকেরা এভাবেই আমার টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। '

এছাড়াও সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের (রেজিস্ট্রেশন রেজি: মাদা-৩৮৪ তারিখ ০৮/০২/২০১২) নিয়ে ‘ভদ্রখোলা আদর্শ সংস্থা’ নামে একটি ভুয়া স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে প্রতিবছর সমাজকল্যাণ পরিষদসহ সরকারি দপ্তর থেকে আর্থিক অনুদান নিচ্ছেন বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে।  

অভিযুক্ত সদর উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন বলেন,'আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কাজটি করেছে। ভাতাভোগীদের নামের পাশে চলতি মাসেই আমার নম্বর যুক্ত করে দিয়েছে। আমি বিকাশের পুরো স্টেটমেন্ট তুলেছি। কোনো টাকা আমার বিকাশে আসেনি। আমি থানায় জিডিও করেছি। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করব। '

অভিযুক্ত অপর সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলে জানিয়েছেন। '

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আশাদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজ-খবর নিচ্ছি। যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। '

বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) নুসরাত আজমেরি হক।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।