ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

ঘুমন্ত শিশুকে তুলে নিয়ে হত্যা: আসামিদের ‘মিথ্যা মামলায়’ দিশেহারা বাবা

কাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৪
ঘুমন্ত শিশুকে তুলে নিয়ে হত্যা: আসামিদের ‘মিথ্যা মামলায়’ দিশেহারা বাবা সন্তান হত্যায় মামলা করে বিপাকে নাসির শেখ, ইনসেটে নিহত শিশু ইয়ামিন

রাজবাড়ী: রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে পাঁচ বছরের শিশু ইয়ামিন হত্যাকাণ্ডে মামলা করে বিপাকে তার বাবা। মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে আসামিপক্ষ।

এতেই ক্ষান্ত হয়নি আসামিপক্ষ; নাসির শেখের নামে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।  

এদিকে ইয়ামিন হত্যা মামলা তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে পরিবারটি।  

সবমিলিয়ে উৎকণ্ঠায় সময় পার করছে নিহত শিশু ইয়ামিনের পরিবার।  

নিহত ইয়ামিন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের গোসাই গোবিন্দপুর গ্রামের নাসির শেখের ছেলে।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই রাতে ইয়ামিনকে কোলে নিয়ে ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়েছিলেন তার দাদা মহিদ শেখ ও দাদি নাছিমা বেগম। গভীর রাতে ঘুমন্ত ইয়ামিনকে তুলে নিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যার পর লাশ বাড়ির অদূরে একটি পাটক্ষেতে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।  

এ ঘটনায় ১৯ জুলাই ইয়ামিনের বাবা নাছির শেখ অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে বালিয়াকান্দি থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা তদন্তে নেমে শিশু ইয়ামিন হত্যার সঙ্গে প্রতিবেশী রেজাউল শেখ ওরফে নিজাম শেখের (৪৫) সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। নিজামকে গ্রেপ্তার করে ২৮ জুলাই আদালতে পাঠান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বালিয়াকান্দি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজিবুল ইসলাম।  

আদালতে পাঠানোর আর্জিতে উল্লেখ করা হয়, ‘নিজাম শেখ তার অন্যান্য সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে শিশু ইয়ামিনকে হত্যা করেছেন। ’ তবে অদৃশ্য কারণে সেই সহযোগীদের গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।  

ইয়ামিনের স্বজনদের অভিযোগ, প্রভাবশালী নিজাম জামিনে বের হয়ে মামলা তুলে নিতে তাদের প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। একইসঙ্গে ভাই হাশেম শেখকে দিয়ে আদালতে চাঁদাবাজি ও মারামারির একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করিয়ে তাদের হয়রানি করছে।  

ইয়ামিনের বাবা নাছির শেখ বলেন, নিজাম ও তার পরিবারের সঙ্গে আমার জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। বালিয়াকান্দি থানার পুলিশ নিজামকে গ্রেপ্তারের করে। সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে আমার ছেলেকে হত্যা করেছেন বলে স্বীকারও করেন নিজাম। এরপর পুলিশ নিজামের পরিবারের কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তবে পরবর্তীতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে নিজামের পরিবারের লোকজন আমার ক্ষেতের ফুলকপি কেটে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি করে। নিজাম হাইকোর্ট থেকে জামিনে বের হয়ে আমাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি-ধামকি দিয়ে চলেছে। তার ভাই হাশেম শেখকে দিয়ে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মারামারির দুটি মিথ্যা মামলা দায়ের করিয়ে হয়রানি করছে।

তিনি বলেন, বালিয়াকান্দি থানার পুলিশ নিজামকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানোর পর বিষয়টি নিয়ে আর কোনো গুরুত্ব দেয়নি। নিজামের সহযোগী আসামিদেরও গ্রেপ্তার করেনি। যে কারণে আমি মামলাটি পিবিআইকে তদন্তভার দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করি। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে মামলাটি পিবিআই ফরিদপুর কার্যালয়ের এসআই নজরুল ইসলাম তদন্ত করছেন। তবে তিনিও মামলা তদন্তে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি আমার সন্তান হত্যার সঠিক বিচার চাই।

ইয়ামিনের মা বিথী আক্তার বলেন, আমার আরো দুটি শিশু সন্তান আছে। আমি সবসময় আতঙ্কে থাকি। কখন ওরা আবার আমার এই দুই সন্তানকেও তুলে নিয়ে মেরে না ফেলে।

ইয়ামিনের দাদি নাছিমা বেগম বলেন, আমার কোল থেকে তুলে নিয়ে আমার কলিজার টুকরা নাতিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিজামসহ যারা আমার নাতিকে হত্যা করেছে আমি তাদের সবার ফাঁসি চাই।

এ বিষয়ে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে। তদন্তাধীন মামলার বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে ইয়ামিনের পরিবার যদি কোনো নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন তাহলে তারা বালিয়াকান্দি থানায় যোগাযোগ করতে পারেন। আমি তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য থানায় বলে দেব।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই ফরিদপুর কার্যালয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, মামলাটি তদন্তের কাজ চলমান আছে। তদন্তাধীন মামলার বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।