ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জুন ২০২৪, ২০ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

ক্ষমতার লাগামহীন অপব্যবহার বেনজীরের মতো ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন তৈরি করছে: টিআইবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৮ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৪
ক্ষমতার লাগামহীন অপব্যবহার বেনজীরের মতো ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন তৈরি করছে: টিআইবি

ঢাকা: সাবেক পুলিশ ও র‌্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদের অবৈধভাবে বিপুল অর্থ ও সম্পদ অর্জন এবং তা অর্জন করতে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারের যে চিত্র উঠে আসছে তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সংস্থাটি বলছে, উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের ক্ষমতার লাগামহীন অপব্যবহার বেনজীরদের মতো ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন তৈরি করছে যা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার জবাবদিহি কাঠামোকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।

একইসাথে এসব ক্ষমতার অপব্যবহারের সাথে জড়িত সহযোগী এবং সুরক্ষা প্রদানকারীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি জোরপূর্বক জমি দখলে ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

সোমবার (৩ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করে টিআইবি।

সাবেক পুলিশ প্রধানের বিপুল পরিমাণ অর্থ ও জমির মালিকানার নতুন নতুন তথ্য প্রতিনিয়ত সামনে আসছে। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, যার প্রায় সবক্ষেত্রেই তিনি ভয় দেখিয়ে দখল করেছেন কিংবা প্রকৃত মালিককে জিম্মি করে জমি বিক্রয়ে বাধ্য করেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই এসব জমির মালিক ছিলেন সংখ্যালঘুরা। আর এই কাজে নিজ বাহিনীর পাশাপাশি অন্যান্য সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সংস্থার সদস্যদের যথেচ্ছ ব্যবহারও করেছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের এমন দৃষ্টান্তকে ন্যক্কারজনক আখ্যা দিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাবেক পুলিশ প্রধান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ভয় দেখিয়ে, জোর প্রয়োগ করে জমি কিনে নেওয়া এবং তা করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী ও সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার সদস্যদের যোগসাজশের যে সকল অভিযোগ জানা যাচ্ছে তা সত্যিই ভয়ংকর। তার এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের কোথাও বিচারপ্রাপ্তির সুযোগও বলপূর্বক প্রতিরুদ্ধ করা হয়েছে। এমন অবস্থায় মূল অপরাধী ও যোগসাজশকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি ভয়ে বা জিম্মি হয়ে জমি বিক্রয়ে বাধ্য হওয়া ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।

সাবেক পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ যখন তদন্তাধীন রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত নামে-বেনামে নতুন নতুন সম্পদের হদিস পাওয়া যাচ্ছে, তখন সাবেক পুলিশ প্রধানের পরিবারসহ দেশত্যাগ কীভাবে সম্ভব- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ড. জামান বলেন, গণমাধ্যমরে খবর অনুযায়ী, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক পুলিশ প্রধান দেশ ছেড়েছেন এবং দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থও তুলে নিয়েছেন। এমন বাস্তবতায় তার মতো আলোচিত ব্যক্তির সবার অজান্তে দেশ ছেড়ে যাওয়া সত্যিই অবাক হওয়ার মতো। তার এই বিদেশে চলে যাওয়ার ঘটনা যোগসাজসের মাধ্যমে হয়েছে কিনা, ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন ও তা বিদেশে পাচারে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছিল কিনা, কিংবা তার বিরুদ্ধে তদন্ত বাস্তবে শুধুই লোক দেখানো কিনা; এমন প্রশ্ন ওঠা মোটেও অমূলক নয়। এক্ষেত্রে এটি সুস্পষ্ট যে, ক্ষমতা কাঠামোর একটি নির্দিষ্ট অংশ তাকে সুরক্ষা প্রদান আগেও করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে। ফলে সাবেক পুলিশ প্রধানকেই দুর্নীতির দায়ে আইনের আওতায় আনলেই হবে না, তাকে সুরক্ষা বা সহযোগিতা প্রদান করা সকল ব্যক্তিরই যথাযথ বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সাবেক পুলিশ প্রধান হিসেবে আইনের ভক্ষকের উৎকট দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, এতো দিন ধরে দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন, অথচ বিষয়টি সরকারের নজরে আসেনি- এমন দাবি মানার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে, এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, এমন অপরাধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের একাংশ শুধু তাকে সুরক্ষা দেয়নি, সহযোগিতাও করেছে, ক্ষেত্র বিশেষে উৎসাহও দিয়েছে, যা প্রশাসনযন্ত্রে রাজনৈতিক অঙ্গনের ভেতরে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন তৈরিতে অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখছে। সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দাবি অনুযায়ী, যারা দুর্নীতি করেছে তাদের সবার তথ্য সরকারের কাছে আছে। বিরল হলেও বাস্তবতার এমন স্বীকৃতির যথার্থতার স্বার্থে সরকারকে জবাব দিতে হবে- তাহলে একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতির এমন বিপুল নজির সৃষ্টি কীভাবে সম্ভব হলো? একইভাবে সেক্ষেত্রে সেই তালিকা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় এনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহনশীলতার অঙ্গীকারের যথার্থতার প্রমাণ দিতে হবে, অন্যথায় এমন অঙ্গীকার প্রহসনে পরিণত হবে বলে যে ধারনা জনমনে রয়েছে তাই প্রমাণিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৮ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৪
এসএমএকে/এমজে

 
 

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।