ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বেনজীর বিদেশে গেলেন সরকার কেন জানলো না, প্রশ্ন চুন্নুর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৩ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২৪
বেনজীর বিদেশে গেলেন সরকার কেন জানলো না, প্রশ্ন চুন্নুর

ঢাকা: দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের মুখে পড়া সাবেক পুলিশপ্রধান (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিদেশে যাওয়া সরকার কেন জানলো না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু। সরকারি চাকরি করে বেনজীর কীভাবে বিপুল সম্পত্তির মালিক হলেন তা নিয়েও প্রশ্ন করেন চুন্নু।

বুধবার (৫ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে মুজিবুল হক চুন্নু এসব প্রশ্ন তোলেন। এ সময় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

বেনজীর ইস্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আলেকজান্ডার এদেশ জয় করেন। তখন এদেশে কিছু দিন ছিলেন, এদেশের আলো-বাতাস, মানুষের মনের গতিবিধি লক্ষ্য করেন। তার এক জেনারেল ছিল সেলুকাস নামে। তাকে বললেন যে—কী বিচিত্র এদেশ সেলুকাস। আসলেই কী বিচিত্র। একটি পত্রিকার সম্পাদকীয়তে আছে, আমাদের একজন সরকারি কর্মচারী (বেনজীর) ২০১০ সালের ১১ অক্টোবর হাতে লেখা সবুজ পাসপোর্ট নবায়ন করতে যান, যেটা সাধারণ পাবলিকের জন্য। সরকারি কর্মচারীদের জন্য নীল পাসপোর্ট এবং তিনি সেটা নবায়ন করেন। তিনি যখন র‌্যাব ডিজি, তখনো সেই সবুজ পাসপোর্ট। সেখানে পেশা হিসেবে কী লেখা, প্রাইভেট সার্ভিস। র‌্যাব ডিজি, একজন অ্যাডিশনাল আইজি, তার পাসপোর্টে লেখা প্রাইভেট সার্ভিস! কী আশ্চর্য, এটা আমরা কেউ খেয়াল করলাম না! শুধু তাই নয়, তিনি আইজি থাকা অবস্থায় তার সেই সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন সময় বিদেশে গেছেন। ইমিগ্রেশনে তার এন্ট্রি আছে সবুজ পাসপোর্টের। প্রাইভেট সার্ভিস, কী সর্বনাশা কথা! আমরা জানি যে আওয়ামী লীগ সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, রেড পাসপোর্ট ছিল, সবুজ পাসপোর্ট ছিল, সবুজ পাসপোর্ট দিয়ে সিঙ্গাপুর যাওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রী সেদিন তাকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাদ দিয়েছিলেন।  

‘আর একজন আইজি, ডিসিপ্লিনারি ফোর্সের চিফ। এই ব্যক্তি যখন আইজি ছিলেন, তখন কী সুন্দর বক্তব্য তার। তিনি পুলিশ বাহিনীর সব সদস্যের উদ্দেশে বলেছিলেন, এই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা, তোমরা কেউ করাপশন (দুর্নীতি) করতে পারবে না, আমি আইজি, আমার নাম বেনজীর। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার জিরো টলারেন্স। জিরো টলারেন্স দুর্নীতির বিরুদ্ধে, ভালো কথা। সেই ব্যক্তি তার নামে তার পরিবারে নামে গোপালগঞ্জে রিসোর্ট, ন্যাচারাল পার্ক, ৬৩১ বিঘা জায়গায়, কীভাবে? তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে কীভাবে সম্ভব? শুধু তাই নয়, তিনি যখন র‌্যাব ডিজি, মহানগরের পুলিশ কমিশনার এবং আইজি, সেই সময়ের মধ্যে তিনি কিন্তু এই সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। অবসর নেওয়ার পর যদি তার পৈত্রিক ব্যবসা থাকে, সেটার মালিক হন আপত্তি ছিল না। কিন্তু চাকরি করাকালে তিনি এই সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। ’

বিরোধী দলের চিফ হুইপ বলেন, সারা দেশে এই ব্যক্তির কারণে ক্ষমতাসীন দলের এত কাজ করার পরেও আজকে প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি র‌্যাব ডিজি এবং ডিএমপি কমিশনার থাকা অবস্থায় যে জমিগুলো কিনেছেন সে জমিগুলি বেশির ভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের। তারা অনেকেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন এখন সাংবাদিকদের কাছে। কায়দা-কৌশলে পুলিশ দিয়ে ভয় দেখিয়ে সেই সমস্ত সম্পত্তি তিনি কিনেছেন। রাজধানীর গুলশানে বিলাসবহুল চারটা ফ্ল্যাট, এক হালি ফ্ল্যাট কিনেছেন একদিনে। উত্তরায় এবং বাড্ডায় সাততলা দুইটা বাড়ি। ভাওয়াল রিসোর্ট, যে রিসোর্টের অভিযোগ অনুসারে, প্রায় ৩০/৪০ বিঘা জায়গা বনের। বন বিভাগ থেকে এখন বলা হচ্ছে, বনের জায়গা দখল করে ভাওয়াল রিসোর্ট করা হয়েছে। সেখানে আমরা জানতে পারলাম ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি। একটি শিশির বিন্দু ... ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এসটি পিটার্স স্কুল অব লন্ডন লিমিটেড, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ৩৩টা ব্যাংক হিসাব।

মুজিবুল হক বলেন, শুধু তাই নয়, ঠাকুরগাঁও সদরে ৫০ বিঘা জায়গা তার এবং তার ফ্যামিলির নামে। জলঢাকা নীলফামারীতে ৫০ বিঘা জায়গা। নীলফামারী সদরে ৫০ বিঘা জায়গা, বান্দরবান সদর এবং লামা উপজেলায় ২৫০ বিঘা জায়গা তার নামে। সেন্টমার্টিনে বেনজীরের নামে ৪ বিঘা জায়গা, ইনানী বিচ কক্সবাজারে দুই বিঘা জমি মেয়ের নামে। রাজৈর উপজেলায় তার স্ত্রীর নামে ২৭৩ বিঘা জমি। গাজীপুরে ২০০ বিঘা জমি।

তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে তিনি বিদেশে চলে গেলেন। চলে যাওয়ার আগে পত্রিকার নিউজ অনুযায়ী, প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেছেন। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, এই যে বেনজীর তার পরিবারসহ বিদেশে গেলেন, তিনি জানেন না। খুব কষ্ট পেলাম। তিনি জানবেন না কেন? যেহেতু নিষেধাজ্ঞা নেই যেতে পারেন। কিন্তু জানবেন না কেন। কারণ তিনি এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন হয়ে গেছেন। ইমিগ্রেশনে তো ভিআইপি, সারা দেশে আলোচিত বেনজীর, তিনি ইমিগ্রেশন দিয়ে গেছেন আর ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট তার মন্ত্রণালয়কে জানায়নি, সরকারকে জানায়নি। যদি না জানিয়ে থাকে তাহলে ইমিগ্রেশনের সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা দরকার। অনেকে বলছেন তার বিরুদ্ধে তো ওয়ারেন্ট নেই। ২৪ এপ্রিল থেকে দুদক তার বিরুদ্ধে টিম করে বিভিন্ন তথ্য চাইছে। সারা দেশের মানুষ জানে।  

মুজিবুল হক বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতা বিরোধী দলের, চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবেন, তাকে আপনারা বিমানবন্দরে আটকে দেন। দুই ঘণ্টা বসিয়ে রাখতে পারেন। এই রকম একজন ভিআইপি, যিনি সারা বাংলাদেশে জায়গা কেনার বাকি রাখেননি, তিনি চলে যাবেন দেশের বাইরে, আর সরকার জানবে না এটা হতে পারে না। একটা চেক নিয়ে পাঠালে ১০ লাখ, ২০ লাখ টাকার, সাতদিনের নোটিশ লাগে। ৭০-৮০ কোটি টাকা তিনি কীভাবে উত্তোলন করলেন আমি জানি না। সরকারের এত বাহিনী, তারা কী খবরাখবর রাখে? তারা কেন সরকারকে এসব জানান না। দুই টন গম যদি ইউনিয়নের মেম্বার বিক্রি করে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়ে যায়। একজন এমপি কাবিখার কাকে কী দিল সেটা পত্রিকায় ফলাও হয়ে যায়। মামলা হয়। আর কৃষককে ৫০ হাজার টাকা লোনের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়। এই লোকটির এত কোটি কোটি টাকা, এত সম্পত্তি, কীভাবে সম্ভব হলো। কেন সরকার দেখলো না।  

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, যতই বলেন সরকারের দায়-দায়িত্ব নেই, এই কথা বললে দেশের জনগণ মানবে না। কারণ এই ব্যক্তি তো এই সরকারের আমলে প্রমোশন পেয়েছে। এই সরকারের আমলে চাকরি থাকা অবস্থায় এই সমস্ত সম্পদ ক্রয় করেছে, দুর্নীতি করেছে। আর সে-ই বলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স! বিষয়টিকে যদি গুরুত্ব দিয়ে সরকার ব্যবস্থা না নেয়, দুদক তদন্ত করছে, তদন্ত যদি বছরের পর বছর চলে, শেষ না হয়, কোর্টে যদি বিচার না হয়, তাহলে দেখা যাবে, আরও যারা আছে বেনজীর, তারা আশকারা পাবে। যত আমলা আছে, সংসদ সদস্য আছে, তাদের হিসাব আপনি নেন। আমি আমার হিসাব এক ঘণ্টার মধ্যে দেব। এই সরকারি কর্মচারীর এত দুর্নীতির কারণে প্রমাণ হয়েছে, সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২৪
এসকে/এমইউএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।