ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

মুক্তাগাছায় প্রাণিসম্পদের বিনামূল্যের দোকান বরাদ্দে কোটি টাকা বাণিজ্য!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১১ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২৪
মুক্তাগাছায় প্রাণিসম্পদের বিনামূল্যের দোকান বরাদ্দে কোটি টাকা বাণিজ্য!

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত কাঁচাবাজারের দোকানগুলো বিনামূল্যে বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও একেকটি দোকান দুই লাখ থেকে তিন লাখ টাকায় বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।  

অভিযোগ উঠেছে, এতে এক কোটি টাকার বেশি ‘বাণিজ্য’ করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় তদন্ত দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা ও সচেতন মহল।  

বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধি ও নিরাপদ আমিষের জোগান দেওয়ার লক্ষ্যে দেশের ১৪০টি পৌরসভায় প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়নে কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছাসহ পাঁচটি উপজেলার পৌর বাজারে নির্মাণ করা হয়েছে শেডঘর। এর মধ্যে মুক্তাগাছায় নির্মিত শেডঘরে বিনামূল্যের ৫৭টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয় ব্যবসায়ীদের। এক্ষেত্রে দোকান হস্তান্তর দলিল বাবদ পাঁচ হাজার টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও প্রতিটি দোকান দুই থেকে তিন লাখ টাকায় বরাদ্দ দিয়েছেন পৌর মেয়র মো. বিল্লাল হোসেন সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা।  

দোকান বরাদ্দ পাওয়া মো. ইনসান আলী বলেন, পৌরসভা থেকে দুটি দোকান বরাদ্দ পেয়েছি। এজন্য মেয়রের সঙ্গে কথা বলে দুটি দোকান বাবদ সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়েছি।    

মো. জুয়েল রানা নামের অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, একটি দোকান বরাদ্দের জন্য পৌরসভায় আড়াই লাখ টাকা দিয়েছি। তবে দলিলে লিখা আছে, মাত্র পাঁচ হাজার টাকা।  

বিনামূল্যের দোকানে টাকা দিয়েছেন কেন- জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাপ-দাদা এ ভিটায় (জায়গায়) বসে ব্যবসা করেছেন। এখন অন্যরা দুই-তিন লাখ টাকা দিয়ে আমাদের ভিটা বরাদ্দ নিয়ে নিতে চায়। এ কারণে বাপ-দাদার ভিটা ধরে রাখার জন্য বাধ্য হয়ে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে দোকান নিয়েছি। এমনকি এ শেডের সবাই আমার মতো টাকা দিয়েছে। কেউ টাকা ছাড়া দোকান পায়নি। তদন্ত করে দেখেন।    

নন্দীবাড়ী এলাকার মসলা ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন বলেন, চার লাখ টাকা দিয়ে আমার বাবা মো. আব্দুল হালিম ও আমি দুটি দোকান বরাদ্দ নিয়েছি। কিন্তু দলিলে লিখা আছে, পাঁচ হাজার করে মোট ১০ হাজার টাকা।  

মো. জহির উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করি। আমার মালিকসহ সবাই টাকা নিয়ে দোকান বরাদ্দ নিয়েছে, এটা সবাই জানে। কিন্তু প্রথমে শুনেছিলাম এসব দোকান বিনামূল্যে দেওয়া হবে।

তবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে মুক্তাগাছার পৌর মেয়র মো. বিল্লাল হোসেন সরকার বলেন, আমার কাছে কেউ টাকা দেয়নি, দিয়ে থাকলে প্রমাণ করুক।    

এদিকে নিম্নমানের কাজে দায়সারাভাবে নির্মিত এ কাঁচাবাজার প্রকল্পে বরাদ্দ কত তা জানেন না সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে প্রকল্পের বরাদ্দের বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুল জলিল।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ প্রকল্পের কাজ দেখভাল করতে আমাকে অফিসিয়ালি বলা হয়েছে। এর বাইরে সমস্ত কাজ করেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ফলে বরাদ্দ বা আর্থিক কোনো বিষয় জানা নেই। তারা টেন্ডার দিয়ে, তারাই বিল তুলে নিয়েছে।

তবে মুক্তাগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌর চন্দ্র সাহা জানান, এ উপজেলায় শেড নির্মাণ বরাদ্দ ছিল এক কোটি ৭২ লাখ টাকা।

একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে জেলার ঈশ্বরগঞ্জ, ত্রিশাল, গফরগাঁও ও ফুলপুর উপজেলায়। ওই কাঁচাবাজারগুলোতেও দায়সারাভাবে শেড নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে।  

প্রকল্পের ঠিকাদার মো. আকতারুজ্জামান বলেন, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, ঈশ্বরগঞ্জ, ত্রিশাল, গফরগাঁও ও ফুলপুর উপজেলায় প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হয়েছে। এর জন্য ময়মনসিংহ জেলায় প্রায় আট কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু একত্রে টেন্ডার হওয়ার কারণে আমি আলাদাভাবে বরাদ্দের সঠিক পরিমাণ বলতে পারব না।  

তবে ময়মনসিংহের পাঁচটি উপজেলায় মোট বরাদ্দ ১০ কোটি ৯১ লাখ টাকা বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।

এ বিষয়ে প্রকল্পের উপপরিচালক পার্থ প্রদীপ সরকার তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, তথ্য পেতে হলে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে আসতে হবে। এর বাইরে তথ্য দেওয়ার সুযোগ নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২৪

এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।