ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সাংবাদিক নাদিম হত্যার এক বছর, কান্না-হতাশা এখন পরিবারের সঙ্গী

সাগর ফরাজী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৭ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৪
সাংবাদিক নাদিম হত্যার এক বছর, কান্না-হতাশা এখন পরিবারের সঙ্গী

জামালপুর: জেলার বকশীগঞ্জের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যাকাণ্ডের এক বছর। কিন্তু সেই আলোচিত ঘটনার এখনও চার্জশিট দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

 

এ ঘটনায় এজাহার ভুক্ত আসামিরা জামিন নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে ক্রমসই। মামলার প্রধান আসামি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান বাবু কারাগারে থাকলেও তার ছেলে রিফাত এখনও ধরাছোঁয়া বাইরে। এ অবস্থায় বিচার পাওয়া নিয়ে হতাশায় নাদিমের পরিবার।

প্রায় রাতেই ছেলে নাদিমকে স্বপ্নে দেখেন মা আলিয়া বেগম। তার কথা মনে হলেই কবরের পাশে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি। কান্না জড়িত কণ্ঠে আলিয়া বেগম বলেন, প্রতি রাতেই আমি বাবাকে স্বপ্নে দেখি। কিন্তু আমার বাবা কথা বলে না। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। যে পর্যন্ত ফাঁসি না হয়; তারা যেন ছাড়া না পায়। যারা আমার বাবাক মেরেছে তাদের অবৈধ টাকা রয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, পুলিশের কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান পান্নার শক্তিতে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। এর জন্যই রিফাতকে ধরতে পারেনি পুলিশ। জামিনে থাকা আসামিরা আমাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রশ্ন হলো, তাহলে কি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী? কেনো এক বছরেও গ্রেপ্তার হলো না দ্বিতীয় আসামিসহ বাকিরা।

জানা গেছে, গত বছরের ১৪ জুন রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বকশিগঞ্জের পাটহাটি এলাকায় হামলার শিকার হন বাংলানিউজের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম। পর দিন হাসপাতালে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ১৮ জুন বকশিগঞ্জ থানায় মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন তার স্ত্রী মনিরা বেগম। এ সময় মামলার দ্বিতীয় আসামি ফাহিম ফয়সাল রিফাত ছাড়া গ্রেপ্তার হয়েছিল ১৭ জন। কিন্তু এখন কারাগারে রয়েছে শুধু বাবুসহ সাতজন।

বকশিগঞ্জ থানা পুলিশ থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পর এখন মামলাটির তদন্ত করছে সিআইডি। মামলা চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন এখানও না দেওয়ায় হতাশায় রয়েছে নাদিমের পরিবার। এবারও ঈদে আনন্দ নেই পরিবারটিতে। শুধু মা আলিয়া বেগমই নয় নাদিমের দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীরও একই অবস্থা। পরিবারের কর্তার হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান তারা। সেই সঙ্গে বাবুর ফাঁসিরও দাবি করেন তারা।

নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার এক বছর হয়ে গেছে। আমি আমার সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করছি। আমি যে মামলা করেছিলাম সেই মামলায় অধিকাংশ আসামি জামিনে বের হয়ে আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। আমরা সিসি ক্যামেরায় দেখেছি আমার স্বামীকে প্রকাশ্যে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে সিসিটিভির বাইরে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়। এসময় বাবুসহ কয়েকজন সেখানে ছিল। আসামিও করা হয়েছে তাদের। কিন্তু মামলার চার্জশিট এখনও হয়নি। আসামিরা জামিন নিয়ে নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছেন।

নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই। কেনো এখনও মামলার দ্বিতীয় আসামিকে ধরতে পারিনি এর জবাব চাই। আমার বাবাকে হত্যা করে তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন। সবাই বের হয়ে যাচ্ছে জেল থেকে। আর মাত্র সাতজন আসামি জেলে রয়েছে।  

বাদী পক্ষের আইনজীবী ইউসুফ আলী বলেন, এক বছর আগে হওয়া মামলা এখনও একই অবস্থা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুটি সংস্থার হাত বদল হলেও মামলার তদন্তের কোনো বদল আসেনি।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এসআই গোলাম কিবরিয়া বলেন, মামলাটি নিয়ে আমাদের কাজ প্রায় শেষ। যে কোনো সময় আমরা মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।