ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

রিমালের ক্ষত, খুলনার উপকূলে নেই ঈদের আনন্দ

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৯ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২৪
রিমালের ক্ষত, খুলনার উপকূলে নেই ঈদের আনন্দ

খুলনা: ঝড়ে ঘর ভাঙি গেছে। কোনো রকমে ঠিক করে অমনি থাকছি।

মানষির বাড়ি কাজ কুরে খাই। গায়ে আগের মতো বল পাই না। মানষে কাজে নিতে চায় না। খাইয়ে না খাইয়ে চলি। একজন কডা টাকা দিল, তাই দিয়ে সিমাই কিনিছি। এ হলো আমাগে ঈদ।

সোমবার (১৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহার দিন সকালে নিজের দুর্দশার কথা এভাবেই তুলে ধরেন খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ মো. কলিম ঢালী।

একই সুরে দাকোপ উপজেলার ঝুলন্ত পাড়ার সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলে জিল্লুর রহমান বলেন, ঝড়ে সব গেছে। এরপর আবার এখন কাজ-কাম নেই। সুন্দরবনের মাছ ধরতি পারি না। মাছ ধরা নিষেধ। পোলাপান নিয়ে কী খামু। ঈদের সেমাই-চিনি কিনতে পারিনি। কেউ দেয়নি। অনেক কষ্টে আছি।

একই পাড়ার মিলন নামে এক জেলে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে মেলা বাতাস ও পানি ওইছে, যে কারণে ঘর ভাঙে গেছে। এহন মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। বউ, বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে কষ্টে আছি। ঘূর্ণিঝড় আমাকে ঈদটা মাটি কইরে দিছে।

একই এলাকার মো. আজু বৈদ্য বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমি কোনো সহযোগিতা পাইনি। সুন্দরবনে মাছ ধরা বন্ধ তাই কাজও নেই। ছোটবেলা থেকে সুন্দরবনে মাছ ধরি। মাছ ধরতে যাওয়ার সরকারি কার্ড আছে। আগে চাল পেতাম কিন্তু দুই বছর কোনো কিছু পাইনি। মেম্বার বলে সিটে নাম নেই।

গত ২৬ মে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। রিমাল তাণ্ডবের ২২ দিন পার হলেও ওসব এলাকার মানুষ এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

খুলনার বটিয়াঘাটার কাজীবাছা নদীর পাড়ের ডেউয়াতলা গ্রামের বাসিন্দা সখিনা বেগম ও দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের কালাবগীর ঝুলন্ত পাড়ার বাসিন্দা রূপবান বিবি জানান, ঝড়ে সব ভাইস্যা গেছে। শুধু ঘরখানই দাঁড়াই আছে।

ঈদ উদযাপনে সবাই যখন ব্যস্ত রয়েছেন, পশু কোরবানি করছেন তখন অনেকটা কষ্টে দিন কাটাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবার। এখনও মেরামত করা হয়নি তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই একমাত্র বসতঘর। চিংড়িঘের ও ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। ছিন্নমূল মানুষগুলো রয়েছেন চরম হতাশায়। ত্রাণ কার্যক্রম নামমাত্র। ফলে বিষাদের ছায়ায় ঢাকা পড়েছে তাদের ঈদ আনন্দ।

আক্ষেপ করে অনেকে বলছেন, ঈদ উৎসব আমাদের জন্য নয়। অভুক্ত অবস্থায় আছি। খাবারের জন্য বাচ্চারা কাঁদছে। এ কান্না তো সইতে পারছি না। খাবার পানির সংকটের কথা উল্লেখ করেন অনেকে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, খুলনা জেলায় ২০ হাজার ৭৬২টি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে জলোচ্ছ্বাস এবং জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে মাছের ঘের ও ফসলের জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৭৯৬ জন কৃষক। ক্ষতি হয়েছে ৪২ কোটি ৯৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯০ টাকার ফসলের। লবণ পানিতে প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে ৩ হাজার ৬০০ পুকুর এবং ৯ হাজার ১১৫টি ঘেরের মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, পোনা। এতে ক্ষতি হয়েছে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের।

ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তায় পর্যাপ্ত সরকারি বরাদ্দ এলেও বিতরণ হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, কয়রা উপজেলায় ১৯০ টন চাল, ১০ লাখ নগদ টাকা, ৩ লাখ টাকা শিশু খাদ্য, ৩ লাখ টাকা গো-খাদ্যের জন্য ঘূর্ণিঝড় রিমেলের আগে থেকে এখন পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পাইকগাছা ১৭০ টন চাল, ১০ লাখ নগদ টাকা, ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা শিশু খাদ্যের জন্য, ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা গো-খাদ্যের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দাকোপে ২৩০ টন চাল, ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ, ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা শিশু খাদ্য, ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা গো-খাদ্যের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ টাকাগুলো ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২৪
এমআরএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।