ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জুন ২০২৪, ২০ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

ঢাকায় ফেরা: ট্রাক-পিকআপে ঝুঁকির যাত্রা

অতিথি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৪ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৪
ঢাকায় ফেরা: ট্রাক-পিকআপে ঝুঁকির যাত্রা

সাভার (ঢাকা): পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির পর কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে কর্মমুখী মানুষ। তবে যেমন ঝুঁকি নিয়ে নাড়ির টানে গ্রামে ছুটে গেছেন তারা, ঠিক তেমন ঝুঁকি নিয়েই ট্রাক কিংবা পিকআপে ফিরছেন অনেকেই।

অতিরিক্ত পরিবহন ভাড়া বাঁচাতেই ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করছেন বলে দাবি কর্মস্থলে ফেরা মানুষের।

শনিবার (২২ জুন) দুপুরের দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার, হেমায়েতপুর, সাভার, নবীনগর ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পল্লিবিদ্যুৎ, পলাশবাড়ি, বাইপাইল, ডিইপিজেড, জিরানীবাজার, শ্রীপুর, কবিরপুর ও বাড়ইপাড়া এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। পরিবহন খরচ বাঁচাতে ঢাকা ছাড়ার মতই ঝুঁকি নিয়ে ফিরছেন কর্মস্থলে ফিরছেন হাজারও মানুষ।

রাজশাহী থেকে পিকআপে করে কর্মস্থল সাভারের আশুলিয়ায় ফিরছেন প্রায় ১২ জন পোশাক শ্রমিক। তাদের মধ্যে একজন হলেন আরিফ হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ঈদের দুই দিন আগে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা করে আগের দিনই পৌঁছে যাই। যদিও তুলনামূলক সময় বেশি লেগেছে। আজ সকালে আবার আমরা সবাই মিলে পিকআপ করে আশুলিয়ার উদ্দেশে রওনা করি। আজ কম সময়ে বাইপাইল পৌঁছে গেছি। আমাদের মধ্যে অনেকেই প্রিন্টিং কারখানা, কেউ গার্মেন্টস কিংবা পণ্য পরিবেশক হিসেবে কাজ করেন। সবাই মোটামুটি বেতন পান। এই অল্প বেতনে বাসের সিট আমাদের কাছে বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নয়।

আরিফের সঙ্গে কর্মস্থলে ফেরা সাজেদুল ইসলামের সরঙ্গ কথা হলে তিনি বলেন, আমি গার্মেন্টসে কাজ করি, বেতন যা পেয়েছি গাড়ি ভাড়া ও পকেট খরচ রেখে সব টাকা বাবা-মাকে দিয়েছিলাম। কিন্তু বাড়ি গিয়ে হাতে রাখা যাতায়াতের সব টাকা খরচ হয়ে গেছে। আমাদের প্রায় সবারই একই রকম সমস্যা। এছাড়া কাউন্টারে বাসের কোসো টিকিটই নেই। শেষের আসনে দুই একটা ফাঁকা থাকলেও তার ভাড়া হচ্ছে দ্বিগুণ। তাই সবাই মিলে আবারও ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে পিকআপে উঠে কর্মস্থলে ফিরলাম।

ট্রাকে করে নওগাঁ থেকে কর্মস্থল সাভারে এসেছেন  ইয়ামিন মিয়া। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় ভোগান্তির সাথে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ দিয়ে যেতে হয়েছে। পুরো পরিবার নিয়ে বাড়ি যেতে অন্তত ৫ হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়েছে। ভেবেছিলাম ঢাকায় ফেরার সময় খরচ কম হবে। সেভাবেই বাজেট রেখেছিলাম। কিন্তু ফেরার সময় তো আরও বড় সমস্যা। গাড়ির আসনই পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়েই পরিবার রেখে ট্রাকে করে করে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা করেছিলাম। ঈদের ছুটিতে যাওয়া মানুষ কর্মস্থলে ফেরা শেষ হলে স্বাভাবিক ভাড়া দিয়ে আমার পরিবার ঢাকায় আসবে। সময়মতো কর্মস্থলে না পৌঁছালে চাকরিতে চাপ পড়বে। ফলে যে যেভাবে পারে কর্মস্থলে ফিরছেন।

পিকআপ চালক এমদাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সব সময় কাঁচামাল ঢাকায় নিয়ে যাই। ঈদের আগেও কাঁচামাল নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলাম। ফেরার সময় স্ট্যান্ডে পৌঁছলে বাড়িফেরা মানুষেরা পিকআপে উঠে পড়েন। পরে তাদের গ্রামে নামিয়ে দেই। কর্মস্থলে ফেরার সময়ও আমার পিকআপেই তারা সাভারে এসেছেন। কেন পিকআপে আসছেন যাত্রীরা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাসে ভাড়া বেশি আদায়টা হচ্ছে প্রধান কারণ, এছাড়া দীর্ঘ সময় বাসেন জন্য অপেক্ষা করতে হয়, ভাড়া বেশি, প্রতিটা স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে দাঁড়ানোসহ আরও নানা কারণ থাকতে পারে।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি লায়ন মো. ইমাম বাংলানিউজকে বলেন, ধীরে ধীরে ট্রাক-পিকআপে মানুষ পরিবহনের প্রবণতা বাড়ছে। এভাবে পণ্যবাহী পরিবহনে মানুষ পরিবহন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যারা ট্রাক-পিকআপে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করছেন তাদের বেশিরভাগ মানুষই নিম্ন আয়ের মানুষ। পরিবহন ভাড়া বাঁচাতে তারা এভাবে যাত্রা করছেন। এখনই পণ্যবাহী পরিবহনে মানুষ পরিবহনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। তা না হলে অনেকের প্রাণ যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ঈদে বিশেষ যানবাহনের ব্যবস্থা করা হলে এই শ্রেণির মানুষ আর এভাবে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করবে না।

সাভার হাইওয়ে থানার পরিদর্শক (ওসি) আইয়ুব আলী বাংলানিউজকে বলেন, সড়কে স্বাভাবিকভাবেই যানবাহন চলাচল করছে। তবে ঈদের ছুটি শেষে মানুষ রাজধানীতে ফিরতে শুরু করায় যানবাহনের সংখ্যা মহাসড়কে বেড়েছে। ট্রাক কিংবা পিকআপে যাত্রী পরিবহন এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি। ট্রাক-পিকআপে যাত্রী পরিবহন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩  ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৪
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।