ঢাকা: ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের যে আশ্বাস দিয়েছে, তাতে আপত্তি তুলেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে আলোচনা না করে কীভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই আশ্বাস দিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই ইস্যুতে সরব হয়েছে মমতা সরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরকালে গত শনিবার গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের আশ্বাস দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তবে রোববার ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়ন হয়েছে।

১৯৯৬ সালে গঙ্গা-তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি সই হয়। এই চুক্তি পুনর্নবায়নের জন্য টেকনিক্যাল স্তরে আলোচনা শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, তৃণমূলের অভিযোগ, রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে চুক্তি নবায়ন হয়েছে। রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই চুক্তি নবায়নকে পশ্চিমবঙ্গকে ‘বিক্রি করার পরিকল্পনা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিস্তা চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্যের বুকে রাজ্যকে এড়িয়ে রাজ্যের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়—এমন কোনো কাজ করা সহজ হবে না।

তৃণমূলের বক্তব্য, গঙ্গা চুক্তিতে রাজ্য সরকারও পক্ষ। কিন্তু নবায়নের বিষয়ে রাজ্য সরকারকে কিছুই জানানো হয়নি, যা অত্যন্ত খারাপ।

পাশাপাশি বলা হয়েছে, এই চুক্তি বাবদ রাজ্য সরকারের যে পাওনা অর্থ, তা-ও বকেয়া রয়েছে। গঙ্গার ড্রেজিংয়ের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে, যা বাংলায় বন্যা ও ভাঙনের প্রাথমিক কারণ হয়ে উঠেছে।

১৯৯৬ সালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি হয়। তাতে একাধিক রাজ্য সরকারও শরিক ছিল। চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তৃণমূল বলছে, ২০১৭ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও ফারাক্কা বাঁধের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বেড়িবাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ার একাংশে গঙ্গাভাঙন নিয়ে ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই চিঠির প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূল বলেছে, দু’বছর আগে মমতাও বলেছিলেন, ফারাক্কা ব্যারেজের জন্যই বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকাকে ভাঙনের মুখে পড়তে হচ্ছে। যার ফলে মানুষের ভিটেমাটি যেমন যাচ্ছে, তেমনই ক্ষতি হচ্ছে চাষেরও।

তৃণমূল কংগ্রেস খানিকটা হুঁশিয়ারির সুরেই বলেছে, সংবিধান অনুযায়ী অন্য দেশের সঙ্গে কোনও বিষয়ে চুক্তি সই করার অধিকার কেন্দ্রের রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রকে এটাও বুঝতে হবে, রাজ্য সরকার সহযোগিতা না-করলে তিস্তা পানি বণ্টনের মতো চুক্তি থমকে থাকে। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থানের পর কেন্দ্রও সম্মত হয়েছে, বাংলাকে এড়িয়ে গিয়ে তারা কিছু করবে না। অনেকের মতে, রাজ্যকে এড়িয়ে চুক্তি নবায়ন করলে তা ঝুলে যেতে পারে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৪
নিউজ ডেস্ক