ঢাকা, শনিবার, ০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বিল’ পাস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৭ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০২৪
‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বিল’ পাস

ঢাকা: গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ব্যাংকের পাশাপাশি অ-ব্যাংক পরিশোধ সেবাদানকারীদের আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বিল-২০২৪’ সংসদে পাস করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিলটি পাসের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সংসদে উপস্থাপন করেন এবং তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

এর আগে যাচাই-বাছাই ও সংশোধনী প্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের বিশৃঙ্খলা নিয়ে সমালোচনা করেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের কথা এলে আতঙ্ক আসে এবং প্রায়ই বড় কোম্পানিগুলোর সুদ মওকুফ করে দেওয়া হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সদস্য পংকজ নাথ বলেন, চার শিল্প প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। নিয়ম না মেনে চারটি প্রতিষ্ঠানের ছয় হাজার ৪৯৭ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করা হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন ছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক ধুঁকে ধুঁকে মরছে। বেসরকারি ব্যাংক এনবিএল-এর কী অবস্থা তাও জানি। সুদ কখন মওকুফ হয়। প্রাকৃতিক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাসে ধ্বংস, ঋণগৃহীতার মৃত্যু বা দৈব-দুর্বিপাকের কারণে। কিন্তু কিছুই হয়নি। দুর্যোগও হয়নি। খাত বিবরণ করে, খোঁড়া অজুহাত দিয়ে তাদের সুদ মওকুফের সুযোগ দেওয়া হয়। আর একটি রাষ্ট্রায়াত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক ধুঁকে ধুঁকে মরছে। এই লোকগুলোকে চিহিৃত করতে না পারলে প্রধানমন্ত্রীর মহতি উদ্যোগ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। একটা বিতর্কিত ব্যক্তির নাম প্রতিদিন আলোচনা হচ্ছে, দুর্নীতির কারণে। এক ব্যক্তি রাষ্ট্রের তিন, চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে একটি সরকারি ব্যাংকে থেকে, এনবিআরের পরিচালক, আপিলাত ট্র্যাইবুনালের চেয়ারম্যান; তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল ১৫ বছর আগে। কে তাকে সুপারিশ করল এনবিআরের পরিচালক বানাতে? কে তাকে করল ট্রাইবুনাল চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের পরিচালক? শর্ষের মধ্যেই ভূত! এই ভূত প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ সরাতে পারবেন না।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, পি কে হালদার টাকা নিয়ে ভারতে চলে গেছে। অনেক কোম্পানি আজ দেউলিয়া অবস্থায়। যারা লিজিং কোম্পানিতে টাকা রেখে নিস্ব তারা ফেরত পাবে কি না, তা এই আইনে আছে কি না তা বোধগম্য নয়। আইন হচ্ছে কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক তার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না। ব্যাঙের ছাতার মতো ব্যাংক হয়ে গেছে। ১০/২০টি ব্যাংক আজ বন্ধের অবস্থায় আছে। তাদের আর্থিক অবস্থা নাজুক।

স্বতন্ত্র সদস্য হামিদুল হক খন্দকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা ক্লাস ছেড়ে আন্দোলন করছেন। তারা সর্বজনীন পেনশনে যুক্ত হতে চাচ্ছেন না। কারো ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া সমীচীন হবে না। সরকারকে বলব বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য। আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের কথা এলে সকলের মধ্যে আতঙ্ক চলে আসে।

পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ হবে আমলযোগ্য, অজামিনযোগ্য এবং অ-আপসযোগ্য।

বিলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি ‘অগ্রিম পরিশোধ দলিল’ ইস্যু, ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া জনসাধারণ থেকে যেকোনো প্রকার বিনিয়োগ গ্রহণ, ঋণ প্রদান, অর্থ সংরক্ষণ বা আর্থিক লেনদেন উদ্ভব হয়, এরূপ কোনো অনলাইন বা অফলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করা যাবে না। এসব বিধান অমান্য করলে সাজা হবে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক-কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো পরিশোধ ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ, পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনা বা ইলেকট্রনিক মুদ্রায় পরিশোধ সেবা দিতে পারবে না। একইভাবে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নেওয়া ছাড়া কোনো পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনা বা পরিশোধ সেবা দিতে পারবে না। এই বিধান লঙ্ঘনের সাজা হবে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০২৪
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।