মাওয়া (মুন্সিগঞ্জ): নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে মর্যাদা এনে দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের ওপর তাদের খবরদারি করার মানসিকতা বদলেছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী উপলক্ষে শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেলে সেতুর মাওয়া প্রান্তে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুকে আয় দিয়ে বিচার করবো না। এটা আমাদের গর্বের সেতু। টাকার অংক দিয়ে বিচারের নয়। এই একটা সিদ্ধান্ত, বাংলাদেশকে সেই মর্যাদা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আগে যারা কথায় কথায় আমাদের ওপর খবরদারি করতো; আর ভাবখানা ছিল, যে এরা ছাড়া বাংলাদেশ চলতেই পারবে না, তাদের সেই মানসিকতাটা বদলে গেছে। এখন বাংলাদেশ শুনলে সমীহ করে আন্তর্জাতিকভাবে।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের জনগণ একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়নি। সফল হয়েছে। আমরা এখন আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তুলবো।
পদ্মা সেতুর সুফলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, পদ্মাপাড়ের মানুষ আমরা সব সময় কষ্ট ভোগ করতাম, আসতে যেতে। প্রথমে ১৯৫২ সালে দাদার সঙ্গে আমরা ঢাকায় যেতে নৌকায় পার হই এই পদ্মা। চারদিন চার রাত লেগেছিল। তখন আব্বা (বঙ্গবন্ধু) কারাগারে। এই যাতায়াতে কত মানুষের জীবন গেছে। বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আজকে আর কোনো সেবা বঞ্চিত হয় না।
অনেক ঝড়-ঝাপটা পার করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণত কোনো প্রকল্প শেষ হলে সেই শেষ হওয়ার অনুষ্ঠান হয় না। কখনো করা হয় না, শেষ হয়ে যায়। তবে পদ্মা সেতু অনেক ঝড়-ঝাপটা পার করে অনেক বাধা অতিক্রম করে নির্মাণ করতে হয়েছে। দেশের জনগণের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে যারা জড়িত, যারা জমি দিয়েছে, তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাতে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি। এটি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানোর অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মনজুর হোসেন ও পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পদ্মা সেতুর থিম সং প্রচার করা হয়। এছাড়া পদ্মা সেতুর ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। সুধী সমাবেশে সেতুমন্ত্রী এবং সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা স্মারক দেওয়া হয়।
২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর মূল পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০২২ সালের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমত্তা পদ্মা নদীর বুকে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দেশের বৃহত্তম এ সেতুর উদ্বোধন করেন। ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতু রেল সংযোগ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের পর থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে নিয়মিত গাড়ি ও ট্রেন চলছে।
বহুমুখী এ সেতু নির্মাণ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর মধ্যে অবশ্য এক হাজার ৮৩৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
পদ্মা সেতু সরাসরি দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করেছে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২৪
এমইউএম/এইচএ