ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাবার সিন্দুক থেকে এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা চুরি করে স্বামীকে দেন মেয়ে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৪
বাবার সিন্দুক থেকে এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা চুরি করে স্বামীকে দেন মেয়ে প্রতীকী ছবি

ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা চুরির ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছিলেন এক ঠিকাদার মো. আব্দুল হামিদ বাবলু (৫৪)।  

মঙ্গলবার (৪ জুলাই) মোহাম্মদপুর থানায় ওই ব্যবসায়ী বাদী হয় মামলাটি করেন।

মামলা দায়েরের চার দিনের মাথায় থানা-পুলিশ জানতে পারে, ওই ব্যবসায়ীর টাকা চুরির সঙ্গে জড়িত তার একমাত্র মেয়ে মিনা হামিদ। আর সেই টাকা মেয়ে দিয়েছেন তার স্বামীকে। অথচ মামলার সময় বাবার সঙ্গে থানায় গিয়েছিলেন মিনা।

এ ঘটনায় শনিবার (৮ জুলাই) আব্দুল হামিদের মেয়ে মিনাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে অভিযান চালিয়ে মিনার স্বামী সাকিবুল হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় সাকিবুল হাসানের কাছ থেকে  চুরির ৯০ লাখ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদে মিনা হামিদ পুলিশকে জানান, বাবার সিন্দুক থেকে টাকা নিয়ে তিনি নিজের পছন্দে বিয়ে করা স্বামীর হাতে তুলে দেন।  

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুল হক ভূঞা বলেন, ব্যবসায়ী হামিদের বাসার সিন্দুক থেকে টাকা চুরির ঘটনায় জড়িত তার একমাত্র মেয়ে মিনা ও তার স্বামী সাকিবুল। জিজ্ঞাসাবাদে তারা টাকা চুরির কথা স্বীকার করেছেন। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

জানা যায়, পেশায় ঠিকাদার আব্দুল হামিদ ওরফে বাবুল স্ত্রী–সন্তান নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে থাকেন। ঈদুল আজহার দু-দিন আগে সপরিবার তিনি ভোলায় গ্রামের বাড়িতে যান। ঈদ উদ্‌যাপন শেষে গত ২০ জুন ঢাকার বাসায় ফেরেন। ঢাকায় ফেরার ১১ দিনের মাথায় তিনি বাসায় টাকা রাখার সিন্দুক খুলে দেখতে পান, তার ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা নেই।

আব্দুল হামিদ বাসায় সবাইকে টাকার বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু টাকা নেওয়ার কথা কেউ-ই স্বীকার করেননি। পরে হামিদ ৪ জুলাই মেয়ে মিনাকে সঙ্গে নিয়ে মোহাম্মদপুর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে চুরির মামলা করেন।

মামলার পরে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদের বাসায় যান। সিন্দুক না ভেঙে টাকা চুরির সঙ্গে ঘরের লোকজন জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। বাসায় বসবাসকারী প্রত্যেককে কৌশলে টাকা চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

সূত্র জানায়, বাসার সব সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদের একমাত্র মেয়ে মিনা হামিদকে তাদের সন্দেহ হয়। টানা চার দিন বাসায় গিয়ে পুলিশ নানা কৌশলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একপর্যায়ে মিনা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, তিনি সিন্দুকের তালা খুলে টাকা চুরি করেছেন। সেই টাকা তিনি স্বামী সাকিবুল হাসানের কাছে দিয়েছেন। তার তথ্যমতে সাকিবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান বলেন, মিনা হামিদ বার-অ্যাট ল’ পড়ছেন। পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গত বছর রাজধানীর তিতুমীর কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পাস সাকিবুল হাসানকে বিয়ে করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিনা বলেন, তাদের বিয়ে পরিবার মানবে না। এ কারণে তিনি বাবার সিন্দুক থেকে টাকা নিয়েছেন। উদ্দেশ্য ছিল, বাসা থেকে কাউকে না বলে সাকিবুলের সঙ্গে সংসার শুরু করবেন।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুল হক ভূঞা আরও বলেন, ব্যবসায়ী আবদুল হামিদের বাসার দরজা কিংবা সিন্দুকের তালা ভাঙা হয়নি, অথচ সিন্দুক থেকে টাকা চুরি হয়েছে। প্রথমেই আমরা ধরে নিই, বাসার কোনো লোক এই টাকা চুরির সঙ্গে জড়িত। পরে তদন্ত করে জানা গেল, হামিদের মেয়ে মিনাই টাকা চুরি করেছেন। তার কাছে থাকা চাবি দিয়ে তিনি সিন্দুক খুলে টাকা নেন। বাবার সিন্দুক থেকে টাকা চুরি করার পর সেটি স্বামী সাকিবুলের কাছে তুলে দেন মিনা।

পুলিশের এসআই মতিউর রহমান বলেন, স্ত্রী মিনার দেওয়া ৯০ লাখ টাকা নিয়ে মোটরসাইকেলে করে সিরাজগঞ্জে নিজের বাড়িতে যান সাকিবুল। টাকা গ্রামের বাড়িতে রেখে এসেছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৪
এমএমআই/এসএএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।