ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রাজশাহীতে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৪
রাজশাহীতে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ

রাজশাহী: কোটা সংস্কারের দাবিতে ডাকা ‌‘কমপ্লিট শাটডাউন’র কোনো প্রভাব পড়েনি বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ১১টা পর্যন্ত পুরো শহরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

তবে বেলা সোয়া ১১টার দিকে মহানগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে কোটা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এ সময় দফায় দফায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুম মুবিন সবুজসহ কমপক্ষে পাঁচজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে স্থানীয় একজন ডাল ব্যবসায়ী, একজন কলেজ ছাত্র ও দুইজন সাধারণ পথচারীও রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রাজশাহীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নেন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সেখানে গিয়ে জড়ো হন। একপর্যায়ে তারা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এরপর বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটলে পুরো সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে আশপাশের সব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের যানবাহন চলাচলও। পথচারী ও সাধারণ মানুষজন প্রাণ ভয়ে দিকবিদিক ছুটোছুটি শুরু করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর মহানগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকা দখলে নেয় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আন্দোলনের নামে যদি আর কেউ অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে এর জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত। তিনি আন্দোলনের নামে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান। নাহলে এর দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

এ সময় আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক দাবি করে রাফিন হাসান অর্নব নামের এক ছাত্র। তিনি বলেন, এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অনেক বিশৃঙ্খলাকারী ঢুকে পড়েছে। তারাই বিভিন্ন ক্ষয়-ক্ষতি করেছে। তাই তাৎক্ষণিকভাবে সেখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য প্রকৃত ছাত্র আন্দোলনকারীদের প্রতি মাইকের মাধ্যমে ঘোষণা দেন। এছাড়া তাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতিও আহ্বান জানান এই ছাত্রনেতা।

বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির জানান, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। তারা আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকার নিরাপত্তা আরও বাড়াচ্ছেন বলেও জানান।

এদিকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির মধ্যেও সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। রাজশাহীর জনজীবনও স্বাভাবিক রয়েছে। তবে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় গোটা শহরজুড়েই একটা থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে এর মধ্যে দিয়েই অফিস-আদালতে কাজকর্ম চলছে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা মাঠে ছিলেন। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি স্থানে পিকেটিং ছাড়া এ দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ করার প্রতিবাদে বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনে উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারকে অবরুদ্ধ করেন। সন্ধ্যায় র‍্যাব, পুলিশ ও বিজিবি যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে। টিয়ারশেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর অবরুদ্ধ উপাচার্যকে মুক্ত করে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

এছাড়া বুধবার সন্ধ্যার ওই যৌথ অভিযানের পর শিক্ষার্থীদের অনেকেই বাসায় চলে গেছেন। রাবির প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। তাই রাবির প্রায় সব হলই এখন ফাঁকা হয়ে গেছে। সকালে ক্যাম্পাসে শুনশান নীরবতা দেখা গেছে। কোথাও আর শিক্ষার্থীদের জটলা নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

এদিক রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকেও বৃহস্পতিবার নির্ধারিত সময়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভিন্ন রুটের ট্রেন নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্টেশন ব্যবস্থাপক আবদুল করিম।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জামিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কোটা আন্দোলনকারীদের কমপ্লিট শাটডাউনের কোনো প্রভাব রাজশাহীতে পড়েনি। এরপরও পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। প্রধান প্রধান সড়ক, সরকারি অফিসসহ মহানগর এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কেউ মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৪
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।