ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘গাছ কয়ডা না থাকলে পোতের খয়রাতি হইয়া যাইতাম’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৪
‘গাছ কয়ডা না থাকলে পোতের খয়রাতি হইয়া যাইতাম’

বরিশাল: ‘গাছ কয়ডা না থাকলে পোতের খয়রাতি হইয়া যাইতাম, রাস্তার পাশে নাইলে মানষের বাড়িতে ছাইছে থাহন লাগতো। ব্যাবাক তো লইয়্যা যাইতাছে নদীতে, এহন গাছগুলা বেইচ্চা হাতে যে কয়ডা টাহা হাতে আইছে; হেইয়া দিয়া কোনরহম নতুন জায়গায় ঘর বানাইন্নার কাম শুরু হরমু।



বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের চর ফেনুয়া গ্রামে কালাবদর নদীর ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দা মহসিন বলেন এ কথা।

এমন কথা শুধু মহসিন নয়, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সদর, শ্রীপুর, উলানিয়া, জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নসহ নদী ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষের এখন একমাত্র ভরসা তাদের ভিটের জমিতে থাকা গাছগুলো। নদী যত এগিয়ে আসছে, ততই গাছ কেটে বিক্রিতে মন দিচ্ছেন মানুষ। কারণ মূল্যবান জমিটুকু তো নদীগর্ভে বিলীন হয়েই যাবে, সেই জমির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা গাছ ছাড়া ভাঙনের আগ মুহূর্তে আর কোনোকিছুই অর্থের জোগান দিতে পারে না।  

তবে সবাই যে বাড়ির সব গাছ কেটে কাজে লাগাতে পারছে এমনটাও নয়, অনেকের বাড়ির নারিকেল ও সুপারি গাছ নদীতে বিলীনও হয়ে যেতে দেখা গেছে। যদিও এ বিষয়ে শ্রীপুর ইউনিয়নের চর ফেনুয়া গ্রামের বাসিন্দা নাজমুস সাকিব বাংলানিউজকে বলেন, মূলত নারিকেল-সুপারি গাছের দাম নেই, তাই এ গাছ কেনায় আগ্রহ নেই ক্রেতাদের। নারিকেল-সুপারির মতো গাছ দিয়ে জ্বালানির লাকড়ি কিংবা ছাড়া তেমন কোন কাজে বিশেষভাবে ব্যবহার করা যায় না। তাই সবাই নদীতে বিলীন হওয়ার আগে রেইন্ট্রি, কড়ই, মেহেগনির মতো দামি গাছগুলো বিক্রি করতে কিংবা কেটে নিতে চান।

তিনি বলেন, চলতি বছরের দুই মাসের ভাঙনে শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর মহিষা ওয়াহেদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বাহেরচর ফেনুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে মকবুলের কোল পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্য জায়গার ৬০-৭০টি বাড়ি কালাবদর নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটির তিনটি ভবনসহ আরও শতাধিক বাড়িঘর স্থাপনা বিলীনের পথে। ভাঙনে এসব স্থানের শুধু জমি বিলীন হয়েছে এমনটা নয়, স্থাপনাসহ গাছপালা ও নদীতে ভাসিয়ে নিয়েছে। তাই নদী কাছে আসতেই মানুষ বাড়িঘর যেমন সরিয়ে নিচ্ছে, তেমনি বাড়ির জমিতে থাকা মূল্যবান গাছগুলো বিক্রি করে দিচ্ছে। আর গাছ বিক্রির সেই টাকাই নতুন জায়গায় স্বপ্ন (ঘর) বাধার কাজটিকে এগিয়ে নিচ্ছে।

গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, নদীর ভাঙনকবলিত এলাকায় বিভিন্ন স্থান থেকে গাছের ক্রেতারা আসেন। ভাঙনের কবলে থাকা একজন মানুষের গোটা বাড়ির গাছ দেখে দরদাম ঠিক করা হয়। দাম ঠিক হলে নগদ অর্থ পরিশোধ শেষে শুরু হয় গাছ কেটে নেওয়ার কাজ। একদিনে একাধিক শ্রমিক লাগিয়ে সেসব গাছ প্রয়োজন অনুযায়ী খণ্ড করে কেটেও নিয়ে যান তারা।

গাছ কাটা শ্রমিকদের তথ্যানুযায়ী, সারা বছরজুড়ে তারা গাছ কাটার কাজ করেন। তবে ভাঙন দেখা দিলে নদী তীরবর্তী এলাকায় গাছ বিক্রি ও কাটার হিড়িক পড়ে যায়। তখন কাজের চাপ এতটাই বেশি থাকে যে, হিমশিম খেতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৪
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।