ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কোটা আন্দোলনে সহিংসতার মামলায় ১ নম্বর আসামি আ.লীগ নেতা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২৪
কোটা আন্দোলনে সহিংসতার মামলায় ১ নম্বর আসামি আ.লীগ নেতা

ফরিদপুর: ফরিদপুরের ভাঙ্গায় কোটা আন্দোলন নিয়ে সাম্প্রতিক সহিংসতায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ভাঙ্গার এক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে। মামলায় ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে ও ভাইকেও আসামি করা হয়েছে।

 

ওই আওয়ামী লীগ নেতার নাম দেলোয়ার মাতুব্বর (৫৫)। উপজেলার আলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি। ২০২১ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ওই ইউনিয়নের সোয়াদী গ্রামের মৃত ওমর আলী মাতুব্বরের ছেলে।  

দেলোয়ারকে মামলার ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। মামলার ৩ নম্বর আসামি দেলোয়ারের ছেলে মেহেদী মাতুব্বরকে (২০) ও ১৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে দেলোয়ারের ভাই আবুল মাতুব্বরকে (৪৫)।  

গত ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ভাঙ্গার আলগি ইউনিয়নের সোয়াদী বাসস্ট্যান্ডে কোটা আন্দোলনের সহিংসতা ঘটে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ, সহিংসতা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।  

ঘটনার পরদিন ২০ জুলাই রাতে ভাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কবির হোসেন মোল্লা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এতে ৪৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৫০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ জানতে পারেন কোটাবিরোধী আন্দোলনের উদ্দেশ্যে ভাঙ্গার সোয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভাঙ্গা, নগরকান্দা, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গাসহ আশেপাশের উপজেলা হতে জামায়াত, বিএনপিসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের লোকজন ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে বাঁশ ও কাঠের গুড়িতে আগুন দিয়ে মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করাসহ জনগণের জানমাল এবং মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের ক্ষতিসাধন করছে। থানা পুলিশ এ খবর পেয়ে ওইদিন বিকেল ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান উল্লেখিত আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা মহাসড়কের মাঝখানে কাঠের গুড়ি ও বাঁশে অগ্নিসংযোগ করে মহাসড়ক অবরোধ করে ঢাল, কাতরা, কাঠের লাঠি, বাশের লাঠি, ইটের খোয়া, রামদা নিয়ে সজ্জিত হয়ে উচ্ছৃঙ্খলা ও বেপরোয়া আচরণ করছেন। মামলার বাদী হাত মাইক নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে সরে গিয়ে যানবাহন চলাচলের সুযোগ করে দিতে অনুরোধ করেন।  

আসামিরা এ অনুরোধ উপেক্ষা করে আরো বেপরোয়া হয়ে তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কর্তব্যরত পুলিশের উপর হামলা চালায়। এ সময় জানমাল রক্ষা ও মহাসড়কে যানবাহন স্বাভাবিক রাখার জন্য ভাঙ্গা ও নগরকান্দা থানার অতিরিক্ত পুলিশের সহায়তায় ৩১টি সিসার গুলি ও ১০টি রাবার গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় মামলার বাদি ভাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক কবির হোসেন মোল্যা, উপ-পরিদর্শক অমিও মজুমদার এবং কনস্টেবল হানিফ, ফারুক, নাজমুল, সজীব ও আহাদুল মারাত্মক আহত হন। ঘটনার পরদিন গত ২০ জুলাই ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ, সহিংসতা ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় মামলায় ৪৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৫০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়।  

এ ঘটনার ভাঙ্গা থানার পুলিশ আজ রোববার পর্যন্ত এ মামলার ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ভাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান (৬২), কালামৃধা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিন্টু আকন্দ (৪০) এবং ঢাকা নিউ মার্কেট যুবদলের সভাপতি মো. হারুন মাতুব্বর (৫২)। তবে এ মামলায় এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতা, তার ছেলে ও ভাইকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার মাতুব্বরের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।  

তবে আলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কমল চন্দ্র দাস বলেন, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সোয়াদী বাসস্ট্যান্ডের যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছিল ওই সড়কের সাথেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ারের বাড়ি। তিনি সাবেক ইউপি মেম্বার। তিনি (দেলোয়ার) সহিংসতা ও গোলাগুলির শব্দ শুনে বাড়ি থেকে তার গুদাম ঘরের দিকে দৌড়ে যান। দেলোয়ার বুঝে উঠতে পারেনি ঘটনাটির বিষয়ে। বিষয়টি আমি উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে জানিয়েছি।  

এব্যাপারে ভাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কবির হোসেন বলেন, ‘ভাঙ্গার সোয়াদী বাসস্ট্যান্ডের ওই সহিংসতার ঘটনায় ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। দেলোয়ার হোসেন নামের যে আ.লীগ নেতার কথা বলা হচ্ছে তিনিও ওই ঘটনাস্থলে ছিলেন। ’

এদিকে ফরিদপুর জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির শিকার এড়াতে ফরিদপুর জেলার শত শত নেতাকর্মী বর্তমানে ঘর ছাড়া হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।  

প্রসঙ্গত, ফরিদপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় তিন থানায় চারটি মামলা করেছে পুলিশ। চারটি মামলায় ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি মামলায় অনেক অজ্ঞাতনামা আন্দোলনকারীদের আসামি করা হয়েছে। চারটি মামলার মধ্যে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় একটি, ভাঙ্গায় একটি এবং সদরপুর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। ৪টি মামলায় রবিবার পর্যন্ত ৫৮জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।