পাবনা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সরকারকে পদত্যাগের ১ দফা দাবিতে ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের সময় পাবনায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিনজন নিহত হয়েছেন, আহতের সংখ্যা অন্তত ৫০।
রোববার (৪ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে আন্দোলনরতরা সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজ চত্বরে একত্রিত হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা শহরে ঢোকেন। পুলিশ তাদের ট্রাফিক মোড়ে আটকে দেয়।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদ খানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা শহরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করতে রাজপথে মিছিল বের করে। দুপুর ১টার দিকে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা সেন্ট্রাল গালর্স স্কুলের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদ খান গুলি চালান। ঘটনাস্থলে ২ শিক্ষার্থী নিহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় একজনের।
গণমাধ্যমকর্মীরা সার্বিক পরিস্থিতির ছবি তুলতে চাইছিলেন। কিন্তু তাদের বারবার বাধা দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহতরা দুজনই পৌর এলাকার। একজনের নাম জাহিদুল ইসলাম (১৯), অপরজন মাহিবুল ইসলাম (২০)। এক নিহতের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিহতদের লাশ নিয়ে শহরে মিছিলের চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা একসঙ্গে তাদের ধাওয়া দেয়। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে পুলিশ। এতে পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আহত হন অন্তত ৫০ শিক্ষার্থী। তাদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুত্বর বেশ কয়েকজনকে রাজশাহী ও ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে আন্দোলনকারীরা জানান।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলেন। সরকারদলীয় লোকজন এসে তাদের উসকে দেয়। ধাওয়া পালটা ধাওয়ার মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদ খান গুলি চালান। এতে তিন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছে অন্তত ৫০ জন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাবনা শহর তারা দখলে নিয়েছেন। আন্দোলনকারীরা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাঁড়ারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানের গাড়ি দেখে হামলা চালায়। তার একটি জিপ গাড়িতে আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। শহরের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যাংক, শপিংমল, ক্লিনিকে হামলা করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এর আগে আন্দোলন প্রতিহত করতে পাবনা সদর-৫ আসনের সংসদ সদস্যসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগের নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান নিয়েছিলেন। উভয় পক্ষ দেশিয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় নামেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উভয় পক্ষের মাঝে অবস্থান নিয়েছিল। সরকার দলীয় একটি পক্ষ ধাওয়া দিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, বর্তমানে পুরো শহর জুড়ে তাদের সদস্যরা অবস্থান করছে।
পাবনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। শিক্ষার্থীদের ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছিল। এতে পরিস্থিতি বিগড়ে যায়। হামলা, সংঘর্ষ আগুনের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিই। গুলিতে দুজন, একজন হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক। কাদের কারণে সংঘর্ষ শুরু হয়, তারা গুলি ছুঁড়েছে সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২৪
এসআই/এমজে