ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দেশ শান্ত হয়ে গেলে, জরুরি অবস্থার প্রয়োজন নেই: সেনাপ্রধান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২৪
দেশ শান্ত হয়ে গেলে, জরুরি অবস্থার প্রয়োজন নেই: সেনাপ্রধান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান

ঢাকা: দেশবাসীকে মারামারি-সংঘাত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেছেন, মারামারি করে আর কিছু পাব না।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, দেশ শান্ত হয়ে গেলে জরুরি অবস্থার প্রয়োজন নেই।

সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলে জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আরও বলেন, আপনারা জানেন দেশে একটি ক্রান্তিকাল চলছে। আমি সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের এখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তারা এখানে এসেছিলেন। আমরা একটি সুন্দর আলোচনা করেছি। সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমরা গঠন করব এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে দেশের সমস্ত কার্যক্রম চলবে। আমরা এখন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। গিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করব। আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করব।  

সব হত্যাকাণ্ডের বিচারের আশ্বাস দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, সমস্ত হত্যা, অন্যায়ের বিচার আমরা করব। আপনারা সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা রাখেন, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখুন। আমি সমস্ত দায়-দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনাদের কথা দিচ্ছি, আপনারা আশাহত হবেন না।  

দাবি পূরণ করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনাদের যত দাবি আছে, দাবিগুলো আমরা পূরণ করব এবং দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসব। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করুন। দয়া করে আর ভাঙচুর, হত্যা, মারামারি, সংঘর্ষ—এগুলো থেকে বিরত হোন। আমি নিশ্চিত যে, আপনারা যদি আমার কথা মতো চলেন, আমাদের সঙ্গে যদি একসঙ্গে কাজ করেন, নিঃসন্দেহে আমরা একটি সুন্দর পরিণতির দিকে অগ্রসর হতে পারব। আপনারা দয়া করে আমাকে সাহায্য করেন। মারামারি-সংঘাতের মাধ্যমে আমরা আর কিছু অ্যাচিভ (অর্জন) করতে পারব না। আর কিছু আমরা পাব না। সুতরাং দয়া করে আপনারা সমস্ত ধ্বংসযজ্ঞ, সমস্ত অরাজকতা, সংঘর্ষ থেকে বিরত হোন। আমরা সবাই মিলে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাব। প্রতিটি হত্যার বিচার করা হবে। প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে।

সেনাপ্রধান বলেন, আমরা আজকে সুন্দরভাবে কথা বলেছি। প্রধান প্রধান দলের নেতারা এখানে উপস্থিত ছিলেন। আমি তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম এখানে। তারা এসেছেন এবং আমরা একটি সুন্দর আলোচনা করেছি। আলোচনাটি ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করছি। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে আমরা দেশ পরিচালনা করব। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে কার্যক্রম পরিচালনা করব। আপনারা ধৈর্য ধরেন, আমাকে একটু সময় দিন। আমরা সবাই মিলে সব সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হব। আপনারা আর এই সংঘাতের পথে যাবেন না। শান্তি-শৃঙ্খলার পথে ফিরে আসুন। আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে, অর্থ-সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। লোকজন মারা যাচ্ছে। এসব থেকে আপনারা বিরত হোন এবং আমাদের সাহায্য করেন। আমি সব দায়িত্ব নিচ্ছি।

এক প্রশ্নের উত্তরে সেনাপ্রধান বলেন, আজকে এখানে জামায়াতের আমির ছিলেন, বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা ছিলেন। জাতীয় পার্টির নেতা ছিলেন এবং সুশীল সমাজ; ড. আসিফ নজরুল এখানে ছিলেন। আমার সামনেই ছাত্রদের একটি সুন্দর বার্তা দিয়েছেন। তাকে সবাই শ্রদ্ধা করেন। তার বার্তা শুনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। সুন্দর একটি পরিস্থিতির দিকে আমরা এগিয়ে যাব।  

এখানে আওয়ামী লীগের কেউ ছিলেন না বলেও জানান তিনি। ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, সেনাবাহিনী শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ চালিয়ে যাবে। আপনাদের সবার দায়িত্ব, ছাত্রদের দায়িত্ব, রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব, কর্মীদের দায়িত্ব হলো সেনাবাহিনীকে সাহায্য করা। আপনারা মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করেন ।  

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশ শান্ত হয়ে গেলে, কারফিউর প্রয়োজন নেই। জরুরি অবস্থার প্রয়োজন নেই। আমি আদেশ দিয়ে দিচ্ছি, সেনাবাহিনী কোনো গোলাগুলি করবে না, পুলিশ কোনো গোলাগুলি করবে না। আশা করছি আমার এ বক্তব্যের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, আমরা রাতের মধ্যেই একটা সমাধানে যেতে চেষ্টা করব। তবে আমাদের দুই তিন-দিন সময় দিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০২৪
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।