ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘এক যুগের ময়লা’ একদিনে পরিষ্কার করলেন শিক্ষার্থীরা

অতিথি করেসপন্ডেন্ট, সাভার (ঢাকা) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০২৪
‘এক যুগের ময়লা’ একদিনে পরিষ্কার করলেন শিক্ষার্থীরা

সাভার: কারও হাতে ছিল ঝাড়ু, কারও কোদাল, আবার কেউ কেউ নেমেছেন দীর্ঘ দিন জমে থাকা হাঁটু সমান ময়লা পানিতে। প্রথম দেখায় মনে হবে না তারা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।

নিজেদের মধ্যে চেনাজানাও নেই অনেকের। তারপরও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজেরাই পরিষ্কার করেছেন ময়লা-আবর্জনা।

বুধবার (৭ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ড ও নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইলে বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ, সাভারের পাকিজা গেট, নিউমার্কেট, বাইপাইল, থানা স্ট্যান্ড এলাকায় পড়ে থাকা ট্রাক, বাস, প্রাইভেটকার, পিকআপ, মোটরসাইকেলসহ কয়েক দিনের অপসারণ না হওয়া ময়লা পরিষ্কার করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সরকারি ভবনগুলোও তারা পরিষ্কার করেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর লুট হয়ে যাওয়া মালামালও ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। মহাসড়ক ও এর আশপাশের ময়লাও সরিয়ে নিয়েছেন তারা। ফলে সড়কে চলাচলে গতি ফিরছে।

প্রায় এক যুগ ধরে পড়ে থাকা ময়লা অপসারণ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয়রাও। সহযোগিতা করছেন খাবারসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে। করেছেন প্রশংসাও।

শিক্ষার্থীদের দাবি, কাজে ও কলমে মানুষের চিন্তার পরিবর্তন আনা দরকার। তাহলে ক্লিন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

শিক্ষার্থী সোহাগ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল বাসস্ট্যান্ড মহাসড়কটির ব্যস্ততম একটি স্থান। এই স্থানটি ছিল ময়লা আবর্জনার বাজার হিসেবে। স্থানটি ঘিরে গড়ে উঠেছে কাঁচাবাজার, মাছ ও ফলের আড়ৎ। সেখানেই প্রতিদিন জমা হতো বিপুল পরিমাণ ময়লা-আবর্জনা। বছরের পর বছর জমে থাকা সেসব ময়লাসহ পুরো মহাসড়কটি আমরা পরিষ্কার করছি।

দক্ষিণ গাজীর চট আয়নাল মার্কেটের বাসিন্দা ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান খান বলেন, আমরা সকালে আশেপাশে এলাকার ছাত্ররা সুসংগঠিত হয়ে বাইপাইল বাস স্ট্যান্ড মোড়, ইউনি স্ট্যান্ড ও জামগড়া এলাকায় রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা আবর্জনা সরাতে ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতায় কাজ শুরু করি। আমরা সবাই অনেক আনন্দের সাথে এই কাজগুলো করছি। প্রচুর সংখ্যক ছাত্র জনতা এ কাজে অংশ গ্রহণ করেছে।

গাজিরচট আকবর মন্ডল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রিমু আক্তার বৃষ্টি বলেন, দেশকে একটি ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে আমরা আন্দোলন করেছি। এখন আন্দোলন পরবর্তী সময়ে দেশের রাস্তাঘাট খারাপ অবস্থায় থাকবে এটা হতে পারে না। তাই আমরা সবাই এ কাজে নেমে এসেছি। আমাদের অনেক ভাই বোন জীবন দিয়েছে শুধু মাত্র দেশকে নিরাপদ রাখতে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা সব সময় দেশমাতৃকার যেকোনো কাজে পাশে থাকব। আমরা ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে আহ্বান করছি দেশের সকল শ্রেণির পেশাজীবী মানুষকে যার যার অবস্থান থেকে দেশ গড়ার কাজে সহযোগিতা করতে। হানাহানি ও মারামারি বন্ধ করে প্রিয় মাতৃভূমিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বানও জানান তিনি।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাভার উপজেলা কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সকাল থেকে সাধারণ ছাত্র জনতা স্ব-ইচ্ছায় আমাদের সহযোগিতা করছে। তারা সাভার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সুসংগঠিত হয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করছেন। থানাগুলোর নিরাপত্তায় আমাদের আনসার সদস্যরা পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবে। ইতোমধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আশা করা যায়, খুব দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী আশুলিয়া থানা কর্মকর্তা মনির উদ্দিন খান বলেন, আমার ৩৫ বছর চাকরি জীবনে যত কাজ তার মধ্যে আজ যা করছি তাতে আমি গর্বিত। আজকের এই সমাজ বিনির্মাণে যে কাজ করেছি এরকম আনন্দ আর কখনো পাইনি। ছাত্র-ছাত্রীদের যেই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, এই ছোট ছোট নিষ্পাপ ছাত্ররা যেভাবে ময়লা পরিষ্কার করছে এতে আমার বিশ্বাস এই দেশ ছাত্রদের হাতেই নিরাপদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।