ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘আজকে যারা বিজয় মঞ্চে তাদেরতো সেদিনের যুদ্ধে দেখিনি’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০১ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০২৪
‘আজকে যারা বিজয় মঞ্চে তাদেরতো সেদিনের যুদ্ধে দেখিনি’

ফরিদপুর: ‘৪ তারিখে ফরিদপুরে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সবাই যোদ্ধা ছিলেন। ওইখানে কোন নেতৃত্ব ছিলোনা।

সাথে কিছু অভিভাবক ছাড়া আর কেউ ছিলোনা আমাদের পাশে। আমরা নিজেরা নিজেরা যুদ্ধ করেছি। নিজেরা আলিপুরে সংগ্রাম করেছি। সারা ফরিদপুর অচল করেছি। আমরা কোন নেতৃত্ব পাইনি যে আজকে তারা বড় বড় বক্তৃতা দিবে। কিন্তু আজকে এই বিজয় মিছিলে সেদিনের সেই আহত যোদ্ধারা কোথায়?’

মঙ্গলবার (০৭ আগস্ট) দুপুরে ফরিদপুরে রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের বিজয় উপলক্ষে আয়োজিত আনন্দ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে এসে আহত সহযোদ্ধাদের না দেখে এভাবেই কষ্টের অনুভূতি ব্যক্ত করেন টিয়ারসেলে আহত শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম। সাইফুল বলেন, 'এই অবদান সবার জন্য। আমি এখানে কোন ভেদাভেদ দেখবো না। ৪ তারিখে যারা ছিলো তাদের একজনও কষ্ট পাক এটি আমি চাইনা। কিন্তু সেদিন যারা যুদ্ধ করেছিলো আজকে তারা কোথায়? আজকে যারা বিজয় মঞ্চে তাদেরতো সেদিনের যুদ্ধে দেখিনি।  

তিনি বলেন, সেদিন আমাদের গায়ে রক্ত ঝরেছে। আমরা প্রথমে হসপিটালে নিয়েছি সবাইকে। তখন কোন নেতৃত্ব পাইনি। অতএব আমরা সবাই সমান। এখানে কোন বৈষম্য দেখবোনা।  

একথা বলার সময় তার হাত থেকে মাইকটি নিজের হাতে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন শাহ আরাফাত নামের আরেক যুবক। সাংবাদিকেরা তার বক্তৃতার সুযোগ অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেন।

সাইফুল বলেন, ৪ তারিখে প্রায় চার হাজার ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবক মিলে আমরা আন্দোলনে নামি। ফরিদপুর মেডিকেল থেকে মিছিল নিয়ে ভাঙ্গা রাস্তার মোড় দিয়ে আলীপুরে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে এলে ছাত্রলীগের ছেলেরা হামলা করে। পরে আমরাও পাল্টা অ্যাটাক করছি।
'বারেবারে আমরা বলছি, আমরা তোমাদের উপর আক্রমণ করবোনা। তারপরেও ওরা আমাদের উপর আক্রমণ করে। তাই আমরাও তখন পাল্টা আক্রমণে যাই। ' 

সাইফুল আরও বলেন, এরপর আমরা আওয়ামী লীগ অফিস ভাংচুর করছি। রুকসু ভাংচুর করছি। পুলিশ বলে যে- তোমরা ওই দিকে চলে যাও। আমরা ঠিকই চলে গেছি। কিন্তু কাপুরুষের দল পিছন থেকে টিয়ারগান মারছে। আমরা যারা সহযোদ্ধা ছিলাম পানিতে পড়ছি। কই তখনতো কাউরে পাইলাম না!

এরপর আমরা মসজিদে আশ্রয় নিয়ে হুজুরকে অনুরোধ করে মাইকে অ্যানাউন্স করছি। অ্যানাউন্স করার পরে আমাদের মসজিদে ঢুকতে দিলো কেনো? সম্মতি দিলো কেনো? এজন্য মসজিদের ইমাম সাহেবের উপরে হামলা করে। তার সাদা পাঞ্জাবি রক্তাক্ত হয়ে যায়। আমরা শুধু বলছিলাম- আলীপুরের উদয়ন ক্লাবে আমাদের কিছু ছেলেকে আটকে মারা হচ্ছে। খুবই বাজে অবস্থা। তাদেরকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবো একটু মাইকটা দেন। কিন্তু আমাদের এই ঘোষণা শুনে ছাত্রলীগ, গুন্ডালীগ, পুলিশ লীগ মিলে হামলা করে। সেখানে কিছু মেয়েরাও ছিলো। তাদের উপরে যে কি অত্যাচারটা করেছে! আমরা সেদিন সকাল ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত যুদ্ধ করছি মাঠে।

এর আগে রাজেন্দ্র কলেজের মঞ্চে বিজয় মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তৃতা চলাকালে সাইফুলকে দেখা যায় মঞ্চের অদূরে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ ঝাড়তে। সাংবাদিকেরা তাকে মঞ্চে এসে মাইকের সামনে দাড়িয়ে তাকে বক্তব্যের সুযোগ দেয়ার পরে তিনি এই বর্ণনা দেন।  

জানা গেছে, ফরিদপুরে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের বিজয় উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড় থেকে আনন্দ মিছিল বের করা হয়। এরপর প্রধান সড়ক হয়ে রাজেন্দ্র কলেজ প্রাঙ্গণে পৌঁছে। এসময় বক্তব্য দেন জনি বিশ্বাস, শাহ আরাফাত, বিজয়, মারুফা মিম, আলিফ বিন সাদিক প্রমুখ। সেখানে আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা আবরার নাদিম ইতু উপস্থিত থাকলেও তিনি বক্তৃতা দেননি।

বক্তৃতা শেষে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা শপথ গ্রহণ করেন। শপথ পাঠ করান মেহরুন নিসা স্বপ্না। এরপর আন্দোলনে নিহতদের জন্য দোয়া করা হয়।  

এদিকে একইদিনে শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট গ্রুপ শহরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযান চালায় এবং সড়কে শৃঙ্খলতা ফেরাতে কাজ করে। তাদের সাথে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ইসলামি শাষণতন্ত্র আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবকদের দেখা যায় এ কাজে।

বাংলাদেশ সময়: ১০০১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮,২০২৪
এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।