ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিলের দাবি সাংবাদিকদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৪
গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিলের দাবি সাংবাদিকদের

ঢাকা: সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)'র সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেছেন, ষড়যন্ত্র করে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে পারবেন না। ষড়যন্ত্র করে মানবিক মূল্যবোধকে নষ্ট করতে পারবেন না।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে সে বাংলাদেশকে কলুষিত করার ক্ষমতা আপনার নেই।  সুতরাং সমস্ত ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসুন। সোজা পথে চলেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে চলতে চাই। যদি সোজা পথে না চলেন তাহলে দায়-দায়িত্ব আপনাদের বহন করতে হবে, আমরা করবো না।

শনিবার (৩১ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের চত্বরে 'গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী সব কালাকানুন বাতিল, সাগর- রুনিসহ সব সাংবাদিকদের হত্যার বিচার ও সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

সমাবেশটির আয়োজন করে বিএনপিপন্থি সাংবাদিক ফেডারেশন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও বিএনপিপন্থি সাংবাদিক ইউনিয়ন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পর কোনো দাবি দাওয়ার জন্য রাজপথে নামতে হবে না। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে আমাদের রাজপথে নামতে হচ্ছে। সাগর-রুনি হত্যার বিচার চাইতে হবে কেন। এটা নিয়ে এত তালবাহানা কেন। কেন আপনারা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেন না। কেন কোনো পুলিশের ইনকয়ারি করেননি, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।  

বিএফইউজের এই সভাপতি বলেন, আমাদের আন্দোলনকে আরও তীব্র থেকে তীব্রতর করতে হবে। সাংবাদিকদের সমস্ত প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকদের নিয়োগ দিতে হবে। সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠানে কোনো ভাড়া করার নিয়োগ আমরা মানবো না।

রুহুল আমিন গাজী বলেন, কিছু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করছে। আমরা এটা ঘৃণা ও প্রত্যাখ্যান করি। হত্যা মামলার দায়ের করতে হলে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে। শুধু শুধু একজনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা আমরা ঠিক মনে করছি না। যার যেটুকু অপরাধ তার শুধু সেটুকুই শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু হত্যা মামলার মত মামলা দায়ের করতে হলে আপনাকে যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করে মামলা করতে হবে।

বিএফইউজে'র মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার ১২ বছর হয়ে গেছে কিন্তু আমরা কোন বিচার পাইনি। যেহেতু ফ্যাসিবাদ মুক্তি হয়েছে তাই বর্তমান সরকারকে বলতে চাই অবিলম্বে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। কারণ এ হত্যাকাণ্ডে ফ্যাসিবাদ সরকার জড়িত। পাশাপাশি সাংবাদিকদের কন্ঠ বন্ধ করারা জন্য যত কালা কানুন আছে, তা সব বাতিল করতে হবে। আমরা যেমন সাংবাদিক সুরক্ষা আইন চাই, ঠিক একইভাবে আর কোন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে যেন কোনো সাংবাদিক আহত না হয় সেটাও চাই।

ত্যাগী সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা খবর ছড়িয়ে সাংবাদিক সামাজকে কলুষিত করা হচ্ছে উল্লেখ করে বিএফইউজে'র এ মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের আগেও রাস্তায় থেকে গুলির সামনে দাঁড়িয়ে আমরা সমাবেশ করেছি। তখন বলেছিলাম, ছাত্রদের ওপর গুলি বন্ধ কর, না হয় আমাদের ওপর গুলি কর। কোনোদিন সাংবাদিকতা করতে গিয়ে, কারো অফিসে এক কাপ চা ও খাইনি। শুধুমাত্রই সাংবাদিকতা করেছি, সত্যের পেছনে ছুটেছি। রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থন করলেও কোনোদিন দলদাসের মতো কাজ করিনি। তারপরও কিছু লোক আছে ত্যাগী সাংবাদিকদের কলুষিত করছে। একটি পত্রিকা আমার নামে বড় করে পত্রিকার প্রথম পাতায় লিখেছে আমি নাকি চাঁদাবাজি করি।

কাদেরগণি চৌধুরী বলেন, এত কিছু করার পরও এমন খবর শুনলে কষ্ট লাগে। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ যাচাই করে প্রমাণ করা যায় তাহলে নাকে খত দিয়ে দেশ থেকে চলে যাব। এসব খবর যখন আমার স্ত্রী বাচ্চারাসহ আত্নীয় স্বজন পড়েন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করেন এসব কি করেছি তখন আর সোসাইটিতে মুখ দেখাতে পারি না। এটাই কি সাংবাদিকতা। আমি আল্লাহর কাছে বলব, এ অভিযোগের একটিও যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে আমি যেন ধ্বংস হয়ে যাই।

সমাবেশে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর প্রধান প্রতিবেদক মোরসালিন নোমানি বলেন, আমি তিনটি বিষয়ে কথা বলতে চাই। প্রথমটি হচ্ছে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের ১২ বছরের বেশি সময় পার হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর বলা হয়েছিল ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের ধরা হবে। কিন্ত এত দিনেও তা ধরা হয়নি। আমার দাবি হচ্ছে, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সময় তৎকালীন পুলিশ প্রধান যিনি ছিলেন তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসা বাদ করা হোক। দ্বিতীয়টি হচ্ছে স্বৈরাচার সরকারের পতনের সময় যে চারজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। আর তৃতীয়টি হচ্ছে ১৬ বছর যখন ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতার সময় যেসব সাংবাদিক তেল দেওয়ার কাজ করেছিল তাদের চিহ্নিত করতে হবে। যাতে করে আর তারা কোনো সংবাদ সম্মেলন না করতে পারে।

এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদ খান, ডিইউজে কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ, বিএফইউজে সিনিয়র সহকারী মহাসচিব বাসির জামান, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেক খান, সাংবাদিক নেতা শাহিন হাসনাত, চট্রগ্রাম মেট্রপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহনেওয়াজ, বিএফইউজে সাবেক সহসভাপতি জাহিদুল করিম কচি, বিএফইউজে'র সহ সভাপতি খায়রুল বাশার, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, সাংবাদিক নেতা ও বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা কবি আবদুল হাই সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৪
ইএসএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।