ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দখলমুক্ত হলো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪
দখলমুক্ত হলো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা

মাদারীপুর: মাদারীপুরে দখলমুক্ত হলো দুই বাংলার জনপ্রিয় প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন বাড়িটি উদ্ধার করে।

তবে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা।  

কথাসাহিত্যিকের বাড়ি দখল হওয়ার খবরে জেলাজুড়ে শুরু হয় আলোড়ন। বিষয়টি নজরে এলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসনও। এ ঘটনায় দায়ী বিএনপি নেতার বিচার দাবি করেছেন জেলার কবি, সাহিত্যিক ও লেখকরা।  

দখলে অভিযুক্ত সোহেল হাওলাদার কালকিনি উপজেলা (বর্তমানে ডাসার উপজেলা) বিএনপির সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক। তার বাড়ি কাজীবাকাই ইউনিয়নের পাথুরিয়ারপাড় এলাকায়।  

মঙ্গলবার দুপুরে দখল হওয়া ভিটায় যায় প্রশাসন। সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল। তাদের আসার খবরে মালামাল নিয়ে পালিয়ে যান অভিযুক্ত বিএনপি নেতা।

গত শনিবার মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে সুনীলের পৈতৃক ভিটা দখলে নেন উপজেলা বিএনপির সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক সোহেল হাওলাদার। সেখানে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ছবি, বই, স্মৃতিচিহ্ন নষ্ট ও ভাঙচুরের অভিযোগও ওঠে।  

কাজীবাকাই ইউনিয়নের ওএমএসের ডিলার হওয়ায় সেই বিএনপি নেতা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা দখল নিয়ে সেখানে চালের গুদাম করেন। এ ছাড়া লেখকের বাড়ির সামনে জেলা প্রশাসনের দেওয়া সাইনবোর্ডও ভেঙে সরিয়ে ফেলা হয়। খবর পেয়ে ঘটনার তিনদিন পর বাড়িটি দখলমুক্ত করে প্রশাসন। দখলের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন জেলার সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাহিত্যপ্রেমীরা। তারা বিচার দাবি করেন দখলদারের।

সাহিত্যিক পত্রিকা গপ্পো’র সম্পাদক মাসুদ সুমন বলেন, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা শুধু  দখলমুক্ত করলেই হবে না, এই ঘটনায় জড়িত বিএনপি নেতাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে আবারো অন্য কেউ বাড়িটি দখলের সাহস করবে।

গল্পকার, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক রিপনচন্দ্র মল্লিক বলেন, এর আগেও বেশ কয়েকবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা দখল হয়েছিল। প্রশাসন তা উদ্ধারও করে। কিন্তু কখনই দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এজন্য বার বার এমন ঘটনা ঘটে। এ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে এখন আইনগত ব্যবস্থা নিলে পরে অন্যরা দখল করার চিন্তা মাথায়ও আনবে না।

কবি ও ইতিহাস গবেষক সুবল বিশ্বাস বলেন, দুই বাংলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা এভাবে দখল হয়ে যায়, এটি কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ বলেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা এরইমধ্যে দখলমুক্ত করা হয়েছে। যদি কেউ এই জায়গার মালিকানা দাবি করে, তাহলে আদালতে মামলা করে আসতে হবে। আর অবৈধভাবে যে বা যারা দখল করবে, তার বা তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।

১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মাদারীপুর মহকুমার রাজৈরের আমগ্রামের মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন সুনীল। তার পৈতৃক ভিটা পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে। দেশভাগের পর ভারতে চলে গেলেও মাটির টানে তিনবার পৈতৃক ভিটায় ছুটে আসেন তিনি।  

তার স্মরণে ২০০৪ সালে সুনীল সাহিত্য চর্চা ও গবেষণাকেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়। তবে সেটি আলোর মুখ দেখেনি। ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর কলকাতায় পরলোক গমন করেন এ কথাসাহিত্যিক।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।