ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পলিব্যাগমুক্ত সুপারশপ, পাট-কাগজ-কাপড়ের ব্যাগে খুশি ক্রেতারা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০২৪
পলিব্যাগমুক্ত সুপারশপ, পাট-কাগজ-কাপড়ের ব্যাগে খুশি ক্রেতারা

ঢাকা: আইনে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশের সর্বত্র ব্যবহৃত হচ্ছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন। প্রকৃতির পাশাপাশি যার প্রভাব পড়ছে মানব দেহেও।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণায়ও দেখা যায়, পলিথিনের ব্যবহারের কারণে বিপন্ন হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, মানবদেহে মিলছে ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক। এমন পরিস্থিতিতে ১ অক্টোবর থেকে দেশের সুপারশপগুলোতে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। আর ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারগুলোতেও নিষিদ্ধ হবে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার। সেদিন থেকে পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানাগুলোতেও চলবে অভিযান।

সরকারি এমন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন সুপারশপে গিয়ে দেখা যায়, সেসব জায়গায় পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে ক্রেতাদের দেওয়া হচ্ছে পাট, কাগজ ও কাপড়ের তৈরি ব্যাগ। ক্রেতারাও খুশি মনে সেসব ব্যাগ টাকা দিয়ে কিনে ব্যবহার করছেন।

বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির জিগাতলায় অবস্থিত আগোরা সুপারশপ ও ধানমন্ডি-২৭ এ অবস্থিত মীনা বাজারে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।

মীনা বাজারে কর্তব্যরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাগজের ব্যাগ তারা বিনামূল্যেই দিচ্ছেন ক্রেতাদের পণ্য পরিবহনের জন্য। তবে পাটের ব্যাগ আকার অনুসারে ১০ থেকে ১৯ টাকা করে নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে মীনা বাজারের ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন ম্যানেজার তাসনিম হোসাইন বলেন, আমরা আগে ক্রেতাদের পণ্য দেওয়ার জন্য ওভেন ব্যাগ ব্যবহার করতাম। যেটা পুরো ডিসপোসিবল ছিল না। ১৫-১৬ দিন আগে বর্তমান সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আমরা সেটি পরিবর্তন করে পাট ও কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যা আজ থেকে পুরোপুরি শুরু করেছি। আমরা ক্রেতাদের পণ্য বহন করার জন্য পাট ও কাগজের ব্যাগ দিচ্ছি। মাছ-মাংসের মতো ভেজা পণ্য এসব ব্যাগে দেওয়ার আগে এক ধরনের মোম দিয়ে পলিস করা কাগজে মুড়িয়ে দিচ্ছি। যাতে পানি না পড়ে। তবে সেই কাগজের ব্যাগও ডিসপসিবল।

মীনা বাজার থেকে কেনাকাটা করে বাসায় ফিরছিলেন এনজিও কর্মী হুমায়রা আজিজ। তার বাসা লালমাটিয়ায়। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করার জন্য সরকার ও বিক্রেতাদের পাশাপাশি ক্রেতাদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে। কারণ পলিথিনের কারণে যেমন পরিবেশের দূষণ হচ্ছে, তেমনি আমাদের স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হচ্ছে। আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছি। সরকার সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করায় ভালোই হয়েছে। এ চর্চাটা আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। যদি সুপারশপ থেকে ব্যাগ কিনতে অসুবিধা হয়, তাহলে বাসা থেকে ক্রেতারা ব্যাগ নিয়ে আসতে পারেন।

এ সুপারশপ থেকে কেনাকাটা করে বের হচ্ছিলেন শিক্ষার্থী আলী আফসার। তিনি বলেন, সুপারশপে যারা আসেন তারা শিক্ষিত। তাদের পলিথিনের অপকারীতা সম্পর্কে বোঝানো সম্ভব। কিন্তু স্থানীয় বাজারে যারা কেনাকাটা করেন তাদের বোঝাতে হবে। তাহলেই পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করা যাবে।

এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে সুপারশপে নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বর্জন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি রাজধানীর জিগাতলার আগোরা ও ধানমন্ডি-২৭ এর মীনা বাজার পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শন শেষ তিনি বলেন, সব ধরনের প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে আমাদের এ যুদ্ধ না। আমাদের এ কাজটা হচ্ছে শুধু মাত্র পলিথিন শপিং ব্যাগের বিষয়ে। ময়লার বিনের যে পলিথিন কিনে নেন, সেটার ওপর আমাদের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কারণ সেটার কোনো বিকল্পে আমরা এখনো যেতে পারিনি। প্লাস্টিকের বয়ম যেটা কিনেন, সেটার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। শুধু পণ্য কিনে নিয়ে যাবার সময় প্লাস্টিকের ব্যাগে নেবেন না এবং বাসা থেকেও কোনো পলিথিনের ব্যাগ আনবেন না। যত দ্রুত সম্ভব পলিথিনের ব্যাগ দেশ থেকে আমরা সরিয়ে দিতে চাই।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২৪
এসসি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।