ঢাকা: নির্বাচন নিয়ে ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উদাসীন এমন মন্তব্য করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ ছিল একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেটি করা হয়নি।
শনিবার (৫ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে প্রফেসর কে. আলী ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত "নতুন বাংলাদেশ: পাবর্ত্য চট্টগ্রামসহ সমগ্র বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি" শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকুন সমস্যা নাই। তবে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন আপনারা ঘটান। এটাতো কোনো চাকরি না, আপনাদেরকে দেশ গঠন করতে হবে। এমনই একটা দুর্বল সরকারে আনসার পর্যন্ত অভ্যুত্থান করতে চাই। সুতরাং আমাদের অতি অল্প সময়ের মধ্যে জনগণের নির্বাচিত একটি সরকার প্রয়োজন।
মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, বর্তমান সরকারের কাছে আমরা আশা করে আছি, কিন্তু এ সরকারের কর্মকাণ্ডে আমরা কিছুটা হতাশ হয়ে গিয়েছি। তাদের এক একজন চার-পাঁচটা মন্ত্রণালয় নিয়ে বসে আছে, কিন্তু সেখানে কোন কাজ দেখছি না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এখনো পর্যন্ত কোনো হসপিটালে যায়নি। অসংখ্য ছাত্র চিকিৎসা পাচ্ছে না। এ সরকারের প্রথম কাজ ছিল যারা হতাহত হয়েছে তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা। যারা শহীদ হয়েছে তাদেরকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এই পাঁচ লাখ টাকা তো কোনো টাকাই না! এদেরকে অন্তত ৫ কোটি করে টাকা দেওয়া উচিত ছিল। প্রত্যেকটা পরিবারকে ভাতা দেওয়া উচিত। এই পরিবারগুলো যদি হারিয়ে যায়, মিলিয়ে যায় তাহলে এটা আমাদের জন্য একটা লজ্জার বিষয় হবে। যারা জীবন দিয়ে আমাদেরকে নতুন একটা দেশ গড়ার সুযোগ করে দিয়েছে তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা সবসময় থাকতে হবে। এভাবে এ সরকারের প্রতি আমরা অনেক কিছু আশা করি। কিন্তু বিপ্লবী চেতনা অনেকের মধ্যে না থাকার কারণে তাদের পক্ষ থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত নেওয়া হয়নি।
মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রফেসর ড. ইউনূস একজন বরেণ্য ব্যক্তি। বাংলাদেশের জন্য তিনি রোল মডেল। এ ধরনের একজন দেশসেবককে পেয়ে আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। তার ইমেজ এর কারণে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
তিনি আরও বলেন, আজ থেকে যারা এ সরকারের সাথে আলোচনায় বসবে সে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে মাত্র আধা ঘণ্টা সময় দেওয়া হচ্ছে। এই আধা ঘণ্টায় তারা কি বলবে। যারা এই সরকারের দায়িত্বে আছেন তারা জ্ঞানী হলেও কিন্তু তাদের কোন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই, তারা এলিট ফ্যামিলির মানুষ। গ্রামের মানুষের দুঃখ দুর্দশা তাদের মধ্যে অনেকেই বুঝে না। তাদের পক্ষে এ ধরনের একটা বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ের সরকার পরিচালনা করা খুবই কঠিন।
মেজর হাফিজ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্তই থাকবে। এই দুর্বল সরকার এটা কি ঠিক করতে পারবে না। একটা শক্তিশালী সরকার যদি দেশে আসে; জনগণের নির্বাচিত সরকার তাহলে এ সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে তারা সক্ষম হবে।
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মদদে বাংলাদেশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। নিরীহ ছাত্র-জনতার উপরে গুলি চালিয়েছে এই দৃশ্য দেখলে বুক ফেটে যায়। কিন্তু তারপরেও কি আমরা শিক্ষা নিয়েছি! বিপ্লব হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
মেজর হাফিজ বলেন, বাংলাদেশের দিকে তাকালে মনে হয় না এখানে একটি বিপ্লব হয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো, বর্তমান যে সরকারকে আমরা বসিয়েছি তাদের অনেকের মধ্যেই বিপ্লবী চেতনা নেই। এরা বিপ্লবকে ধারণ করে না। তাদের জন্য এটা হলো একটা চাকরি। এদের মধ্যে কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে দল গোছানোর কথা বলে। আবার এই সরকার একটা রোডম্যাপ এখনো পর্যন্ত দেয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা,অক্টোবর ৫, ২০২৪
ইএসএস/এমএম