নোয়াখালী: নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের (আমাউমেক) সিলিং ডেকোরশনের কাজে ৮ কোটি ৫৯ লাখ ১৭ হাজার ৭৯২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মো. আব্দুছ ছালামসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলার অপর আসামি হলেন- ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর আফসানা জাহান কাকলি।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ।
সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মো. আব্দুছ ছালাম ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর আফসানা জাহান কাকলীর বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধানকালে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সিলিং ডেকোরেশনে ২০১৫-১৬ অর্থ বছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছর পর্যন্ত টেন্ডার প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে বিল পরিশোধ পর্যন্ত তারা পরস্পর যোগসাজশে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। এরপর নিজে লাভবান হয়ে অপরকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের সিলিং ডেকোরেশনের কাজে ৮ কোটি ৫৯ লাখ ১৭ হাজার ৭৯২ টাকা আত্মসাৎ করেন।
অভিযুক্ত সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মো. আব্দুছ ছালাম টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর থানার বাগুয়াটা গ্রামের মৃত মোকদ্দম আলী সরকারের ছেলে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের সম্পাদিত ফার্নিচার আইটেমের ৪৭ নম্বর ক্রমিকে বর্ণিত সিলিং ডেকোরেশনের কাজটি একটি প্রকৌশলীয় নির্মাণ কাজ। কিন্তু সিলিং ডেকোরেশনের কাজটি ফার্নিচার গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করে দরপত্র আহ্বান করা হয়।
অপরদিকে, কমিটি গঠনপূর্বক কোনোরূপ বাজার দর নিরূপণ করা হয়নি। অধ্যক্ষ ডা. আব্দুস ছালামের নির্দেশে বাজারদর কমিটির নামীয় প্রতি বর্গফুট কাজের মূল্য ৬,২০০ টাকা উল্লেখ করা হয়। তাতে তারিখ বিহীন স্বাক্ষর করা হয়। অধ্যক্ষ ছালামের চাপে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি কোনো যাচাই-বাছাই না করে কিংবা কোনোরূপ নোট অব ডিসেন্ট না দিয়ে প্রকৌশল সংক্রান্ত নির্মাণ কাজের বিষয়টি অনুমোদন দেন। যার কারণে সরকারি গণপূর্ত বিভাগের দর অনুযায়ী প্রতি বর্গফুট ২১৪.৪৮ টাকার বিপরীতে ওই সিলিং ডেকোরেশনের সম্পাদিত কাজ প্রতি বর্গফুট ৫ হাজার ৯৫০ টাকা পরিশোধ করে সরকারের আর্থিক ক্ষতি করা হয়।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ঠিকাদারকে মোট ১৭,৯৮০ বর্গফুটের বিল পরিশোধ করা হয়। ৯টি বিলের মাধ্যমে প্রতি বর্গফুট ৫,৯৫০ টাকা বিল দাখিল করা হয়। ভ্যাট ও আয়কর বাদ দিয়ে ঠিকাদারকে প্রায় ৮ কোটি ৯৭ লাখ ৭৪ হাজার ১৪২ টাকা পরিশোধ করা হয়। গণপূর্ত বিভাগ ও বেসরকারি অভিজ্ঞ ডেকোরেটিং প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে পরিমাপ প্রতিবেদন মোতাবেক প্রতি বর্গফুট সিলিং ডেকোরেশনের ব্যয় ধরা হয় ২১৪.১৮ টাকা। এতে ১৭,৯৮০ বর্গফুট কাজের মোট ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫০ টাকা। সাবেক অধ্যক্ষ ও ঠিকাদার প্রতি বর্গফুট ৫,৯৫০ টাকা দরে পরস্পর যোগসাজশে ৮ কোটি ৫৯ লাখ ১৭ হাজার ৭৯২ টাকা আত্মসাৎ করেন।
দুদকের নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে লাভবান হয়ে অপরকে লাভবান করেছেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে একটি নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২৪
আরএ