ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ আহরণ বৃদ্ধির আশা, কমতে পারে দামও

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৪
নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ আহরণ বৃদ্ধির আশা, কমতে পারে দামও

বরিশাল: মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে প্রতিবছর আশ্বিন মাসে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা মাঝে রেখে এ মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় মৎস্য অধিদপ্তর। সেই ধারাবাহিকতায় নদী ও সাগর থেকে ইলিশ আহরণে টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে শনিবার দিবাগত মধ্যরাত (১৩ অক্টোবর) থেকে।

এ সময় ইলিশ আহরণ, কেনা-বেচা ও পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ও জাটকা আহরণের নিষেধাজ্ঞা সফল হলে আগামীতে এর উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন মৎস্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা।

নিষেধাজ্ঞার আগ মুহূর্তে ভরা মৌসুমে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বাজারজুড়ে আমদানি কম- এমন অজুহাতে ইলিশের দাম চলে যায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। সব মিলিয়ে চলতি বছরে এ মাছ আমদানিতে জেলে থেকে শুরু করে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকেই উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে ইলিশের আমদানি বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা থেকেই বরিশালের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন,  বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই সাগর থেকে ডিম পাড়ার জন্য প্রচুর ইলিশ নদ-নদীতে আসবে। তারমধ্যে থেকে বেশিরভাগ ইলিশ ডিম দেবে। ইলিশ মাছ সারা বছর ধরেই ডিম দিতে পারে। ফলে সারা বছরই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাছের পেটে ডিম থাকে। ডিম ছাড়ার পর কিছু মাছ সাগরে ফিরে যাবে। আর নিয়মানুযায়ী সাগর ও নদীতে প্রচুর ইলিশও পাওয়া যাবে। তবে এসব কিছু নির্ভর করবে আবহাওয়ার ওপর।

চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না হওয়ার বিষয়ে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। বিগত দিনে সাগর ও নদীতে যে সব জেলেরা গেছে, তারা সবাই ইলিশ পেয়েছে। তবে ঘন ঘন বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সাগরে বেশি একটা মাছ শিকারে যেতে পারেনি। আবার বন্যাসহ তাপমাত্রা বেশি থাকায় নদীতে কিছুটা মাছ কম ছিল। তবে আমরা আশা করছি ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।

ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল, পিরোজপুরের উপকূলীয় এলাকার জেলেরা নিষেধাজ্ঞার সময়ে ডিমওয়ালা ইলিশ শিকার বন্ধ নিশ্চিতের দাবি তুলেছেন।

ভোলার লালমোহন উপজেলার বাসিন্দা ও জেলে আব্দুল বারেক বলেন, বিগত দিনে আমরা দেখেছি নিষেধাজ্ঞার সময় মৌসুমি জেলেরা তৎপর হয়ে ওঠে।   কারণ ডিম ছাড়ার জন্য প্রচুর ইলিশ তখন নদীতে আসে।   আর সেগুলো কারেন্ট জাল দিয়ে ধরে ফেলে মৌসুমি জেলেরা। এতে ইলিশের প্রজনন ধ্বংস হয়। নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে কেউ যাতে নদী ও সাগরে মাছ শিকার করতে না পারে সেদিকে প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। কারণ ডিম ছাড়ার আগে ইলিশ ধরলে ভবিষ্যৎ উৎপাদন হুমকিতে পড়বে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার জেলেরা জানিয়েছেন, এ সময়টায় বঙ্গোপসাগরে প্রচুর ইলিশ পাওয়া গেলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের জেলেরা তা শিকার করতে পারে না। তবে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের সীমানায় এসে মাছ শিকার করে। যা রোধ করবে কঠোর হাতে। নয়তো নিষেধাজ্ঞা শেষে বাংলাদেশের জেলেরা সাগরে গিয়ে আরোহণযোগ্য মাছ পাবে না।

নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশের আহরণ না বাড়লে দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বরিশাল নগরের পোর্টরোডের শহিদ জিয়া মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, ইলিশের আমদানি যত বাড়বে ততোই দাম কমবে।

যদিও সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে ইলিশের দাম বেশি বলে মনে করেন বেশিরভাগ ক্রেতা। হাবিবুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে রপ্তানিযোগ্য মাছ আলাদা করলেও প্রচুর মাছ থাকে। সিন্ডিকেটের কারণে রপ্তানির নামে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ইলিশের দাম আরও বাড়ানো হয়েছে, এককথায় ব্যবসায়ীরা মাছের দাম কমাতে চায় না। কারণ, সবাই জানে দেশের মানুষ ইলিশের প্রতি দুর্বল, দাম যাই হোকে খাওয়ার জন্য কিনবেই। এজন্য তিনি নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের ওপর জোর দিতে বলেন।

শনিবার সকালে পোর্টরোড থেকে ইলিশ কিনেছেন এমন ক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে বড় সাইজের ইলিশের থেকে ছোট ও মাঝারি সাইজের আধিক্য বেশি লক্ষ্য করা গেছে।   ছোটগুলোর মধ্যে প্রচুর জাটকাও ছিল। তবে কোনো ইলিশের দামই কম লক্ষ্য করা যায়নি।  

বাদল নামে একজন জানান, সকালে পোর্টরোডে আকার ভেদে ইলিশের দাম ৯০০ থেকে আড়াইহাজার পর্যন্ত কেজি প্রতি চাওয়া হয়েছে। এমনকি জাটকার কেজিও ৬-৭ শত টাকা। তাহলে নিম্নবিত্তরা কীভাবে ইলিশ কিনবে। সিন্ডিকেট না ভাঙলে আমদানি বাড়লেও ইলিশের দাম কমবে না বলে মত তার।

বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রতিবছর দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইলিশের মোট উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৭১ হাজার ৩৪২ মেট্রিক টন। শুধু বরিশাল বিভাগেই উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৪৩ মেট্রিক টন। তাই প্রজনন মৌসুম শেষে বছর জুড়ে জাটকা নিধন বন্ধ থাকলে ইলিশের উৎপাদন যেমন বাড়বে তেমনি, দেশের মানুষ সাধ্যের মধ্যে দামে ইলিশ কিনতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৪
এমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।