ঢাকা: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। আন্দোলনের ফলে কোটাও সংষ্কার হয়েছে।
সরকারি চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, বয়সের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করে দ্রুত বিসিএস-সহ অন্যান্য সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা উচিত। শিক্ষিত বেকাররা কর্মসংস্থানে প্রবেশ করলে তাদের ও তাদের পরিবারের হতাশা কমবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক তথ্যে জানা যায়, সরকারি চাকরিতে অনুমোদিত পদ রয়েছে ১৯ লাখ ১৫১টি। এরমধ্যে শূন্য পদ রয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৪৪৭টি। চাকরির বিজ্ঞপ্তি না থাকায় এই সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারের পট পরিবর্তেনের কারণে প্রশাসনিক কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং অধীন দপ্তর-সংস্থাগুলোতে অস্থিরতা দেখা দেয়। এতে রুটির কাজের বাইরে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সরকারি চাকরিতে প্রবশের বয়স ৩৫ বছর করা নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, দেশে এখন অনেক বেকারত্ব অনেক বেশি। চাকরির সার্কুলার হচ্ছে না। কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত।
জুলাই-আগস্টের ছাত্র বিক্ষোভের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নানা দাবি উত্থাপিত হতে থাকে। এরমধ্যে চাকরিপ্রার্থীরাও প্রবেশের বয়স বাড়ানোর দাবি করেন। এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে গেলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের যৌক্তিক বয়সসীমা নির্ধারণের বিষয়ে সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গত ৩০ সেপ্টেম্বর কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ১০ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেয় এই কমিটি। সেই কমিটির সুপারিশের আলোকে বয়সসীমা ৩২ হতে পারে। তবে তা উপদেষ্টা পরিষদে চূড়ান্ত হবে।
বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবির উদ্যোক্তা ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে, তারা একটা সুপারিশ করেছে। কিন্তু আমাদের ন্যায্যতার দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। আমাদের দাবি ছিল ৩৫।
আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ইমতিয়াজ বলেন, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলন শুরু করি। ১২ বছর হলো। কিন্তু এর আগের সরকার দাবি আমলে নেয়নি। তারা নির্বাচনে এ বিষয়ে ইশতিহারও দিয়েছে কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি।
বয়স বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে তিনি বলেন, তিন বছরের অনার্স চার বছর এবং ডিগ্রি কোর্স দুই বছর থেকে বেড়ে তিন বছর করেছে। অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করতে একজন ছাত্রের ২১ বছর পেরিয়ে যায়। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের বয়স ২১ বছর থেকে শুরু হলে তা বাস্তবে সম্ভব না।
চাকরির ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতগুলো সরকারি চাকরির বয়স (৩০) অনুসরণ করে জানিয়ে ইমতিয়াজ বলেন, আমরা বলছি মেধা, যোগ্যতা এবং যারা ফিট তাদের নিয়োগ দিতে। বয়স ৩০ বছর পার হলে একজন চাকরিপ্রার্থী নানা কারণে হতাশ হয়ে পড়েন। অনেকে আত্মহত্যাও করেন।
বেকারদের সংখ্যা আনুপাতিক হারে বাড়লেও চাকরির সুবিধা বাড়েনি জানিয়ে তিনি বলেন, এখন গড় আয়ু বেড়েছে। ২০১১ সালে অবসরের বয়স ৫৭ থেকে বেড়ে ৫৯ বছর হয়েছে।
চাকরিতে প্রবেশের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অবসরের বয়সও বাড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে ইমতিয়াজ বলেন, আমরা শুনেছি সচিবদের ৩০-৪০ জনের অবসরের বয়স বাড়ানোর জন্য এই কাজটা করেছে। কারণ তাদের অবসর হবে। অবসরের বয়স বাড়ানোটা অযৌক্তিক। কারণ তারা সচিব পর্যায়ে যে স্কেলে বেতন পাবে সেই বেতন দিয়ে ৫-১০ জনের চাকরি শুরু করতে পারে। আর তাদের বয়স বাড়লে চাকরির সার্কুলারও আসবে না।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি জানান, দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৩৯ লাখ। আর শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৮০ লাখ। আর সব মিলিয়ে এই সংখ্যা চার কোটি ২৫ লাখ।
সরকারের পট পরিবর্তনের সাথে সাথে সরকারি কর্ম কমিশনেও জটিলতা দেখা দেয়। কয়েকটি বিসিএসের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরই মধ্যে চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের পদত্যাগের দাবিও তোলা হয়। ফলে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এবং কমিশনের ১২ জন সদস্য ৮ অক্টোবর পদত্যাগ করেন। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেমকে চেয়ারম্যান এবং আরও চার জন সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের পট পরিবর্তনে এমনিতেই কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এর সাথে চাকরির বয়স নিয়ে একটা জটিলতা আছে। এই জটিলতার অবসান না হলে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশেও বিলম্ব হচ্ছে।
পিএসসির এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন সার্কুলার আসবে বলে মনে করেন চাকরিপ্রার্থীরা। প্রার্থীদের দাবির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাও দ্রুত নিয়োগ দিয়ে বেকারদের কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৪
এমআইএইচ/এমজেএফ