ঢাকা, সোমবার, ১২ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বরিশালে গডফাদারদের চেয়ে বেশি ধরা পড়ছে মাদকবহনকারী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২৪
বরিশালে গডফাদারদের চেয়ে বেশি ধরা পড়ছে মাদকবহনকারী

বরিশাল: ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা মাদকের গডফাদারদের বিগত দিনে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা যায়নি কোনোভাবেই। ফলে এলাকা ভিত্তিক মাদকের সিন্ডিকেটে কোনো রদবদলও হচ্ছে না।

এ অবস্থায় যথারীতি ক্যাম্পাস ও এলাকা ভিত্তিক মাদক ব্যবসার কৌশল পাল্টে চালিয়ে যাচ্ছেন কারবারিরা। যদিও বরিশালে মাদককারবারিদের পেছনে থাকা গডফাদারদের গ্রেপ্তারে সম্প্রতি কঠোর হওয়ার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, সম্প্রতি বরিশালে যারা মাদক নিয়ে ধরা পড়ছে তাদের কাছ থেকে সব চেয়ে বেশি ইয়াবা ও গাঁজা উদ্ধার হচ্ছে। আর এরপরের তালিকায় রয়েছে ফেনসিডিল, জি-মরফিন ইনজেকশন, মদ জাতীয় দ্রব্য। তবে মাঝে মধ্যে আইস উদ্ধারের কথাও শোনা যাচ্ছে।  

গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, বরিশালের আশপাশে কোনো সীমান্ত এলাকা নেই। তাই এখানে বড় ধরনের চালান বলতে ধরনটাও সীমান্ত এলাকার থেকে আলাদা। সেই সঙ্গে বরিশালে মাদকদ্রব্য নৌ ও সড়ক পথ দিয়ে প্রায় সমানভাবেই প্রবেশ করে। তবে সম্প্রতি সড়ক পথের ওপর চাপ বেশি। আর গত কয়েকমাসে এলাকাভিত্তিক মাদককারবারির বাইরে যারা বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে তাদের মধ্য বেশিরভাগই মাদকবহনকারী। অর্থাৎ পরিবহনের কাজের সঙ্গে তারা সরাসরি সম্পৃক্ত। তবে কাজটি এত সূক্ষ্মভাবে করে থাকা মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতরা যে কে মাদকটি পাঠাচ্ছে এবং কে গ্রহণ করবে তা ওই মাদকবহনকারীও জানে না। এক্ষেত্রে একাধিক মোবাইল নম্বর ও একাধিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, ফলে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যান মূল কারবারিরা।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বরিশাল জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. তানভীর হোসেন খান বাংলানিউজকে জানান, আগে নৌপথে মাদকদ্রব্য বেশি আসতো, এখন সড়ক পথে বেশি আসে। গত এক বছরে ৩৪০ কেজি গাঁজা ও ৯৭ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে বেশি। আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বহনকারীরা ধরা পড়লেও, মূল গডফাদার ধরা পড়ছে না, কারণ, মাদক বহনকারীরা এমনভাবে চেইন মেইনটেইন করে যে, গডফাদারের নাম বহনকারীরা জানে না বা জানলেও তা প্রকাশ করেন না।

এ বিষয়ে বরিশাল জেলার পুলিশ সুপার মো. বেলায়েত হোসেন জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে পুলিশ, র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাদকবহনকারী ও ক্ষুদ্র কারবারিরা ধরা পড়ছে। এবার মাদককারবারিদের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনার কাজ শুরু করেছি।

জেলা পুলিশের তথ্যানুযায়ী, ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত বরিশাল জেলায় চার হাজার ২২৫ জন মাদক মামলার আসামি রয়েছে, যেখানে বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকাতে এর পরিমাণ হাজারের কাছাকাছি। তবে সম্প্রতি মাদক মামলার আসামিদের বিষয়ে নতুন করে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে পুলিশ।  

সেই সঙ্গে নতুন যারা এর সঙ্গে জড়িত কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি এখন তাদের বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।  

যদিও সমাজের যে কোনো অসংগতি দূর করতে হলে সাধারণ নাগরিকসহ সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বরিশাল জেলার পুলিশ সুপার মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, সমাজকে ভালো রাখতে আইনশৃঙ্খলা ব্যত্যয় না ঘটে সেদিকে খেয়াল রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে হবে। আমরা জন পুলিশিং ব্যবস্থার মাধ্যমে, আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী, অথবা মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে, জনগণকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।  

আর বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম সম্প্রতি এক সভায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মাদকের সঙ্গে যারা জড়িত, যারা সমাজকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ সোচ্চার রয়েছে। এক্ষেত্রে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি অভিযানের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২৪
এমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।