ঢাকা: দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা অপরাধীদের একটি ‘কেন্দ্র’ বলে চিহ্নিত। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পর পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থাকার সুযোগে অপরাধীরা হয়ে ওঠে আরও বেপরোয়া।
পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে অ্যাকশনে নেমেছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে মোহাম্মদপুর থানায় বিভিন্ন অভিযোগ ও মামলা দায়ের হয়েছে। ভুক্তভোগীদের দায়ের করা এসব মামলা বা অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নিবিড়ভাবে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানান।
পুলিশ জানায়, ৫ আগস্টের পর মোহাম্মদপুর থানায় আজ পর্যন্ত ১০টি হত্যা মামলা রুজু হয়। এসব মামলায় এ পর্যন্ত ২৭ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। একই সময়ে দুটি ডাকাতি মামলাও রুজু হয়। ডাকাতি মামলায় ১৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে ৬ লাখ ২০ হাজার নগদ টাকা, আট ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নয়টি লুণ্ঠিত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ আরও বলছে, এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় ফুট পেট্রোল চালু করা হয়েছে। এছাড়া অপরাধপ্রবণ এলাকাসমূহে নিয়মিত ব্লক রেইড, চেকপোস্ট পরিচালনা করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
গত ২৭ অক্টোবর এক অভিযানে একদিনেই ৪৭ জন অপরাধী গ্রেপ্তার করা হয়। যার মধ্যে দুইজন ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত চাপাতি তৈরির কারিগর। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪০টি চাপাতি উদ্ধার করা হয় ।
মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় গ্যাং ওয়ার এবং মাদক সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দুটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে এবং নিয়মিত ফুট পেট্রোল ও ব্লক রেইড পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্ণিত সময়ে জেনেভা ক্যাম্প এলাকা হতে আট কেজি গাঁজাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর একটি মামলায় ৬০ গ্রাম হেরোইনসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উল্লিখিত সময়ে মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে তিনটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয় এবং এ সংক্রান্ত ঘটনায় ১৭ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। উদ্ধার অস্ত্রের মধ্যে ২০ রাউন্ড গুলিসহ একটি রিভলবার, দুটি পিস্তল, আটটি রাম দা, পেট্রোল বোমা তৈরির কাঁচের বোতল ১৫টি, পেট্রোল ১০ লিটার, ছয়টি চাইনিজ কুড়াল, একটি টেঁটা, আটটি ছুরি ও পাঁচটি বড় চাপাতি উদ্ধার করা হয়।
থানা এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় আটটি মামলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত মোট ১৭ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। আসামিদের কাছ থেকে একটি অটোরিকশা, একটি সিএনজি, চারটি চাপাতি, দুটি সামুরাই ও নগদ দুই হাজার ১৬০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ সময়ের মধ্যে মোহাম্মদপুর থানায় চারটি অপহরণ মামলাও হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে চারজন ভিকটিমকেই উদ্ধার করা হয়েছে। এসব বিষয়ে রুজুকৃত মামলাসমূহ তদন্তাধীন।
গত রাতে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর টহল দল যৌথ অভিযান চালিয়ে রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের ১নং গেট সংলগ্ন এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে নয়জন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির উদ্দেশ্যে রাখা ছয়টি সামুরাই, দুটি ড্রিল মেশিনসহ এর যন্ত্রাংশ, চারটি ধারালো চাকু, একটি শাবল, একটি কাঁচি, দুটি টর্চ লাইট, পাঁচটি রশি ও পাঁচটি প্লাস্টিকের বস্তা জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে তা নিরসন করে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বদ্ধপরিকর। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করা রয়েছে। আমরা আশা করি দ্রুততম সময়ে মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান অগ্রগতি পরিলক্ষিত হবে এবং জনমনে স্বস্তি ফিরে আসবে।
আরও পড়ুন: নিরাপত্তার দাবি নিয়ে মোহাম্মদপুর থানায় শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২৪
এজেডএস/এইচএ/