খুলনা: নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) ইতিহাস বদলে ফেলার ‘অপচেষ্টা’র প্রতিবাদে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর খুলনায় স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন নিসচার খুলনা মহানগর শাখার নেতারা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, নিসচার খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মুন্না, সহ-সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. মেরাজ হোসেন, অর্থ সম্পাদক আফজাল দেওয়ান, কার্যনির্বাহী সদস্য সহকারী অধ্যাপক এম এ মান্নান বাবলু, মো. এম এ সাদী, হুমায়ুন কবীর, মো. মাসুম বিল্লাহ ইমরান প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের সরকারি অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় নিরাপদ সড়ক চাইয়ের ভূমিকাকে গৌণ করে রাখা হয়। প্রস্তুতি সভায় নামকাওয়াস্তে আমন্ত্রণ জানানোর পাশাপাশি গত সাত বছরের রীতি-রেওয়াজের ব্যত্যয় ঘটানো হয়।
এতে বলা হয়, বিশেষ দিনগুলোতে সেরকম কারো অবদানে প্রেক্ষাপট রচিত হলে তাকে নানা আয়োজনে সম্মান জানানো হয়, অবদানের কথা তুলে ধরা হয়। আগে এ দিবসে ইলিয়াস কাঞ্চনকে সম্মান জানানো হতো। ইলিয়াস কাঞ্চন সেদিন রোড সেফটির ওপর এবং সড়ক নিরাপত্তায় বিষয়ে নানা তথ্য তুলে ধরতেন। কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম ঘটল। এবারের সরকারি অনুষ্ঠানে তাকে সামনের সারিতে বসিয়ে রাখা ছাড়া আর কোনো সম্মান দেওয়া হয়নি।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, অনুষ্ঠানে নিসচাকে খাটো করে কতিপয় শিক্ষার্থীকে সম্মুখসারিতে তুলে আনা হয়। সেখানে আনা হয় ২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলনের কথা তোলা। নিসচা কর্মীরা মনে করছেন, এ শিক্ষার্থীদের সরকারের ভেতরে থাকা ফ্যাসিবাদ সরকারের দোসর ও পরিবহন সেক্টরকে যারা লুটেপুটে খেতে চায়, তাদের একটি অংশ পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তাদের চাপের মুখে ইলিয়াস কাঞ্চনকে সেখানে কোনো বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এতকিছুর পরও ইলিয়াস কাঞ্চনসহ সড়কযোদ্ধারা অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান করছিলেন।
এতে বলা হয়, এক পর্যায়ে নিরাপদ সড়ক চাইয়ের অস্তিত্বের ওপর আঘাত করা হয়। বলা হয়, ২০১৮ সালের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সূচনা হয়। এ কথা জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়। এ অনুষ্ঠানে বলা হয়, দেশের মানুষের স্বপ্ন দেখা এবং সড়ক নিরাপদ করার পরিকল্পনার কথাগুলো উঠে আসে ২০১৮ সালের পর থেকে। তাহলে প্রশ্ন জাগে, ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রয়াস এবং কোটি কোটি জনতার আবেগের প্রেক্ষাপট কোথায় হারিয়ে গেল? নাকি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক চাই ও ইলিয়াস কাঞ্চনকে হেয় করতে চায় একটি স্বার্থান্বেষী মহল? কর্মীরা মনে করেন, এ ইতিহাসকে তারা চাপা দিতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইলিয়াস কাঞ্চন তার সড়কযোদ্ধাদের নিয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
কর্মীরা স্মারকলিপিতে বলেন, আমরা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আপনার (জেলা প্রশাসক) মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টাকে জানাতে চাই, নিরাপদ সড়ক চাই- এ আন্দোলনটি ইলিয়াস কাঞ্চনের একার হলেও এখন ১৮ কোটি মানুষের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এখন এটি সর্বজনবিদিত। ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেবেন না সড়কযোদ্ধারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২৪
এমআরএম/আরএইচ