ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতিবিজড়িত বসতভিটার অংশটুকু সংরক্ষণের দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২৪
ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতিবিজড়িত বসতভিটার অংশটুকু সংরক্ষণের দাবি

রাজশাহী: উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক কুমার ঘটকের ৯৯তম জন্মবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে ‘আর্ট মানে আমার কাছে যুদ্ধ’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে রাজশাহীতে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ঋত্বিক আলোচনা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন। তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনের প্রথম দিন ছিল সোমবার (৪ নভেম্বর)।

 

এদিন সন্ধ্যায় রাজশাহীর মহানগরীর মিয়াপাড়ায় থাকা ঋত্বিকের পৈতৃক ভিটায় ধ্বংসস্তূপের ভেতরেই এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজনের উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনী আয়োজনে সভাপ্রধান ছিলেন ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন মাসুদ। আলোচক হিসেবে ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান। সম্মানিত অতিথি ছিলেন ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ. আল মামুন, প্রবীণ সাংবাদিক ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ঋত্বিক কুমার ঘটক শুধু একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা নয়। তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের পথপ্রদর্শক। এমন একজন খ্যাতিমান ব্যক্তির নিদর্শন আমরা ধরে রাখতে পারছি না। তার বসতভিটাকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। তার স্মৃতিচিহ্নকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে ঋত্বিকের স্মৃতিবিজরিত বসতভিটার অংশটুকুকে সংরক্ষণ করতে হবে। সেখানে ঋত্বিকের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য সেখানে ঋত্বিক সংগ্রহশালা বা ঋত্বিক কমপ্লেক্স গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া ঋত্বিক ঘটকের বসতভিটা ভেঙে ফেলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর এজন্য ঋত্বিকপ্রেমীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, রাজশাহীতে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক বাড়িটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সেখানে স্তূপাকারে শুধু ইটগুলো পড়ে আছে, স্মৃতিচিহ্নের আর তেমন কিছুই নেই। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সাংস্কৃতিককর্মীরা। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, যারা এ বাড়ি ভাঙার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঋত্বিক ঘটক জীবনের শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের একটি সময় কাটিয়েছেন রাজশাহী মহানগরীর মিয়াপাড়া এলাকায় তার এ পৈতৃক বাড়িতে। এ বাড়িতে থাকার সময় তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়াশোনা করেছেন। তাকে ঘিরেই তখন রাজশাহীতে সাহিত্য ও নাট্য আন্দোলন বেগবান হয়। এ বাড়িতে থেকেছেন ঋত্বিক ঘটকের ভাইঝি, বরেণ্য কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীও। এ বাড়ির ৩৪ শতাংশ জমি ১৯৮৯ সালে সরকার রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজকে ইজারা দেয়।

এরপর জায়গাটির উত্তরে গড়ে তোলা হয়েছে হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের আধুনিক ভবন। এ ভবনের দক্ষিণ অংশে ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতিবিজড়িত পুরোনো বাড়ির ঘরগুলো দাঁড়িয়ে ছিল। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দোষ চাপিয়ে হোমিওপ্যাথিক কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান পুরোনো স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যার প্রতিবাদস্বরূপ আজ সেই ধ্বংসস্তূপেরর মধ্যেই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে মোমবাতি প্রজ্বালন ও সমবেত সঙ্গীতও পরিবেশন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০২৪
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।