ঢাকা: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর থেকেই আলোচনায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কথিত গণমাধ্যম ‘রিপাবলিক বাংলা’। বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘাত ও সংখ্যালঘুদের ওপর কিছু আক্রমণের ঘটনা ঘটলেও সেসবকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করে তুমুল বিতর্কে আছে চ্যানেলটি।
‘রিপাবলিক বাংলা’সহ ভারতের কতিপয় মিডিয়ার এমন অতিরঞ্জিত প্রতিবেদন দেশে এবং দেশের বাইরে নানা রকমের বিভ্রান্তি ও উসকানি ছড়াচ্ছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার, এমনকি খোদ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তরফ থেকেও অস্বস্তি ও অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।
কিন্তু তাতে দমছে না ‘রিপাবলিক বাংলা’। বেসরকারি চ্যানেলটি তাদের ভিত্তিহীন ও আজগুবি প্রতিবেদন প্রচারের ধারাবাহিকতায় এবার বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল নিয়ে করেছে আরেক বিতর্কিত প্রতিবেদন। যেখানে ‘চট্টগ্রাম বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ জরুরি’ মন্তব্য করা হয়, যা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বলে মনে করছেন অনেকে।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ‘রিপাবলিক বাংলা’র ইউটিউব চ্যানেলে ‘চট্টগ্রাম আলাদা রাষ্ট্র হবে? মাউন্টব্যাটেন- নেহেরুর ভুল ঠিক করার সময় এসেছে? ভারতের হস্তক্ষেপ জরুরি?’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রামে হিন্দু-বৌদ্ধরা জেগে উঠেছে। যে কারণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আতঙ্কে রয়েছেন। ’
উপস্থাপক ময়ূখ রঞ্জন ঘোষকে বেজায় উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘চট্টগ্রাম স্ট্র্যাটিজিক্যালি (কৌশলগতভাবে) বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরামসহ উত্তর-পূর্ব ভারত লাগোয়া যে অঞ্চল রয়েছে তাহলো চট্টগ্রাম। উত্তরপূর্ব ভারতের এই মুহূর্তে কোনো সমুদ্রপথ নেই। আসাম বা ত্রিপুরায় ভারতীয় পণ্য পরিবহনে অনেক অর্থ ব্যয় হয়। অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয় এসব পণ্য। তাই চট্টগ্রাম যদি ভারতের হয়ে যায় তবে এই পথ অনেকটা কমে যাবে। ’
তিনি বলেন, ‘তাছাড়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার যদি ভারতের হয়ে যায় তাহলে বঙ্গপোসাগরে ভারতের যে ডোমিন্যান্স (আধিপত্য), যে আধিপত্য বাড়বে, আমেরিকা ধারেকাছে এগোতে পারবে না। সেন্টমার্টিন নিক, সেন্ট হেনরি নিক; চট্টগ্রামটা যদি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে যায় বা ভারতের হয়ে যায়, তাহলে শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়; গোটা পৃথিবীর যারা বঙ্গোপসাগর দখল করতে চায় তাদের চিন্তার কারণ হয়ে যাবে। ’
ময়ূখ রঞ্জন দাবি করেন, ১৯৪৭ সালের দিকে চট্টগ্রাম হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল ছিল। তাদের তাড়িয়ে দিয়ে চট্টগ্রামকে মুসলিমপ্রধান অঞ্চলে পরিণত করার চেষ্টা চলেছে। কারণ এই চট্টগ্রাম থেকে হিন্দুরা বিদ্রোহ শুরু করতে পারে।
৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ‘রিপাবলিক বাংলা’ আরও নানা বিতর্কিত প্রতিবেদন করেছে। এর ধারাবাহিকতায় সবশেষ গত ৬ নভেম্বরও চ্যানেলটিতে খবর প্রচার হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর ড. ইউনূস প্যারিসে পাড়ি জমিয়েছেন, তিনি আর দেশে ফিরতে না পারেন। অথচ সেদিন দিব্যি অফিস করছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। এমনকি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শহীদ আবু সাঈদের দুই ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি।
চট্টগ্রাম নিয়ে ‘রিপাবলিক বাংলা’র এমন প্রতিবেদন প্রচারে ক্ষুব্ধ হয়েছেন দেশের নেটিজেনরা।
রাজিব আহমেদ নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রতিবেদনটির একটি অংশ শেয়ার করে লিখেছেন, ‘একটা দেশের সংবাদমাধ্যম আরেকটি সার্বভৌম দেশের একাংশ দখলের কথা কয় কেমনে? আইনকানুন কি নাই? আর ইউনূস সরকারের দিল্লি দূতাবাস, প্রেস উইং কী করে? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন আপার সমর্থকরা কি রিপাবলিক টিভির এই হুমকিকেও সমর্থন করে?’
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৪
এসএএইচ