সিলেট: কানাইঘাটে শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন (৬) হত্যা মামলার প্রধান আসামি শামীমা আক্তার মার্জিয়ার নানি কুতুবজান বিবি (৮৫) মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সকালে কানাইঘাট ২ নম্বর সদর ইউনিয়নের নিজ ছাউরা গ্রামে তার মৃত্যু হয়।
জানা গেছে, যোহরের নামাজ শেষে কুতুবজানের জানাজা ও এরপর তাকে দাফন করা হয়।
কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সেলিম আহমদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, শিশু মুনতাহার মরদেহ উদ্ধারের আগেই মার্জিয়াকে আটক করা হয়। এরপর খালে পুঁতে রাখা মরদেহ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সময় আলীফ জান ও কুতুবজানকে আটক করে পুলিশ। পরে তার বয়স বিবেচনায় ইউপি সদস্য হিসেবে আমার জিম্মায় দেয় পুলিশ। কিন্তু যে ঘরে মেয়ে আলীফ জান ও নাতনি মার্জিয়ার সঙ্গে তিনি থাকতেন। ওই ঘরটি বিক্ষুব্ধ জনতা গুড়িয়ে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। যে কারণে তাকে ভাইয়ের বাড়িতে রাখা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সেখানে বার্ধক্যজনিত কারণে কুতুবজানের মৃত্যু হয়।
কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আউয়াল বাংলানিউজকে বলেন, কুতুবজান শিশু মুনতাহা হত্যা মামলার আসামি নন। তাকে থানায় নিয়ে আসা হলেও বয়স বিবেচনায় পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। জানতে পেরেছি আজ সকালে তিনি মারা গেছেন।
শিশু মুনতাহা হত্যা মামলায় চার আসামিকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মামলা তদন্ত কর্মকর্তা কানাইঘাট পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শামসুল আরেফিন জিহাদ ভূঁইয়া। আসামিরা হলেন- মুনতাহার প্রতিবেশী সদর ইউনিয়নের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের মৃত ময়না মিয়ার স্ত্রী আলিফজান বিবি ও তার মা মেয়ে সাবেক গৃহ শিক্ষিকা শামিমা বেগম মার্জিয়া, প্রতিবেশী মামুনুর রশিদের স্ত্রী নাজমা বেগম ও সৈয়দুর রহমানের ছেলে ইসলাম উদ্দিন।
হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ-
স্থানীয়রা জানান, মুনতাহাকে ২৫০ টাকায় প্রাইভেট পড়াতেন মর্জিয়া। তার মা আলিফজান ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। চুরির ঘটনা ও মর্জিয়ার চলাফেরা খারাপ প্রতীয়মান হওয়ায় টিউশনি থেকে তাকে বাদ দেন মুনতাহার বাবা সেলিম আহমদ। সেই ক্ষোভে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠেন মর্জিয়া। মুনতাহার বাবা শামীম আহমদের ওপর প্রতিশোধ নিতে শিশু মর্জিয়াকে অপহরণ করেন তিনি, পরে তাকে হত্যা করেন।
জনতার হাতে আটকের পর মর্জিয়ার মা আলিফজান বেগম জানান, অপহরণের পর মর্জিয়াকে আটকাতে চেয়েছিলেন তিনি। তখন মেয়ে তাকে বলে, ‘টাকা ৫ লাখ পাইমু, আমি আরও দুইটা শিশু আনিয়া দিতাম। ’ অপহরণের রাতে শিশুটিকে জীবিত ঘরে নিয়ে আসেন মার্জিয়া। এরপর আবার নিয়ে যান। এরপর কি হয়েছে তিনি জানেন না।
ঘরের পাশের খালে কাদামাটিতে মুনতাহার নিথর দেহ দেখার পর তিনি ফেঁসে যেতে পারেন এমন ভাবনা কাজ করেছিল তার। তাই মরদেহ কোলে নিয়ে পুকুরে ফেলার চেষ্টা করছিলেন। সে সময় তিনি ধরা পড়েন।
গত ৩ নভেম্বর সকালে বাড়ির অদূরে একটি মাদরাসার জলসা (ওয়াজ মাহফিল) থেকে ছেলে আব্দুর রহিম ও মেয়ে মুনতাহাকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন শামীম আহমদ। সেখান থেকে তাদের ফল কিনে দেন। এরপর মুনতাহা শিশুদের সঙ্গে বাড়ির সামনের সড়কে খেলতে যায়। বেলা আড়াইটার দিকে খাবার খেতে মুনতাহাকে ডাকতে যান স্বজনরা। কিন্তু তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। ওইদিন রাত ১২টায় মুনতাহার বাবা শামীম আহমদ কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২৪
এনইউ/এমজে