ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শত বছরের পুরোনো খেলার মাঠ খনন করে মাছ চাষ!

বদরুল আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
শত বছরের পুরোনো খেলার মাঠ খনন করে মাছ চাষ!

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জ শহরে আবাসিক এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে শতবর্ষী একটি খেলার মাঠকে জলাশয়ে পরিণত করা হয়েছে। সংস্কারের কথা বলে মাঠ থেকে মাটি তুলে এখন সেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে।

মাঠের মাঝামাঝিতে কয়েক ফুট উঁচু প্রাচীর দিয়ে মাঠকে দুই ভাগ করা হয়েছে।

এদিকে সরকারি আবাসিক এলাকার (স্টাফ কোয়ার্টার) ভেতরের জনপ্রিয় মাঠকে জলাশয়ে রূপ দেওয়ার ঘটনায় সচেতন এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা মাঠটিকে আগের অবস্থায় ফেরত চান।

জানা গেছে, ২০২২ সালের নভেম্বরে স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাসকারী সরকারি কর্মকর্তা ও তৎকালীন জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্তে মাঠের দক্ষিণ পূর্বদিকে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি তুলে জলাশয় বানানো হয়। এ নিয়ে ২৩ নভেম্বর দৈনিক খোয়াইয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নজরে আসে। তখন স্থানীয় লোকজন আন্দোলন শুরু করেন এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

পরে এ ব্যাপারে তৎকালীন জেলা প্রশাসক বক্তব্য দেন, বিদ্যালয়ের সামনের অংশকে খেলাধুলার উপযোগী করতে মাটি কাটা হচ্ছে এবং নকশা প্রণয়নের মধ্য দিয়ে মাঠটিকে সংস্কার করা হবে।

কিন্তু দুই বছর অতিবাহিত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে চিত্র ভিন্ন। মূলত মাঠকে জলাশয়ে পরিণত করে সেখানে এখন মাছ চাষ করা হচ্ছে।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, ২০২২ সালে মাঠে যে জায়গা থেকে মাঠি তোলা হয়েছিল সেখানে কার্পজাতীয় নানা জাতের মাছ রয়েছে। কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারের দিকে জলাশয়ের পাশে নানারকম সবজির চাষ করা হয়েছে। মাঠের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে এপার-ওপার গাইডওয়াল দেওয়া হয়েছে।

সেখানে শাকসবজির পরিচর্যায় নিয়োজিত মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগেই সেখানে গাইডওয়ালটি নির্মাণ করা হয়।

এদিকে পুকুরের পর গাইডওয়ালের পশ্চিমে বিদ্যালয়ের দিকেও নতুন করে জলাশয় সৃষ্টি করা হচ্ছে। আগের তুলনায় এ স্থানটি আরও কয়েক ফুট গভীর হয়েছে। শুধু বিদ্যালয়ের সামনে সামান্য জায়গা বাকি রয়েছে।  

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের ভেতরের এ মাঠটি শতবর্ষের পুরোনো। ১৯৭৩ সাল থেকে এখানে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবলসহ বিভিন্ন লীগ আয়োজন করা হতো। তবে গত কয়েক বছর ধরে সংস্কারের অভাবে মাঠটি খেলার অযোগ্য হয়ে যায়। এখন এটিকে পুকুরে রূপান্তরিত করা হয়েছে।

তারা বলেন, মাঠ সংস্কারের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল এলাকার তরুণ সমাজ। কিন্তু মাঠটিকে সংস্কারের বদলে পুকুরে রূপান্তর করায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

ইনাতাবাদ এলাকার বাসিন্দা সৌমিক খান বলেন, আবাসিক এলাকার ভেতরে একটি পুকুর রয়েছে। তারপরও খেলার মাঠ খননের মাধ্যমে দ্বিতীয় পুকুর তৈরি করা দায়িত্বহীনতার পরিচয়। এটি নিন্দনীয় কাজ। এতে তরুণ সমাজ খেলাধুলার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংগঠনের হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, আবাসিক এলাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতরের মাঠটি ঐতিহ্যবাহী। খেলার মাঠ সংকীর্ণ করা উচিত নয়। ২০২২ সালে জেলা প্রশাসন জানিয়েছিল মাঠটিকে পরিকল্পিতভাবে সংস্কার করবে। কিন্তু সংস্কারের নামে এটিকে জলাশয়ে রূপান্তর করা ঠিক হয়নি। আমরা মাঠটিকে নকশা অনুযায়ী সংস্কারের দাবি জানাই।

এ ব্যাপারে কথা বলতে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রভাংশু সোম মহানের ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল ফোনে কল দিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি।

কথা হলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রিয়াঙ্কা পালের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। বিস্তারিত জেনে তারপর কথা বলতে পারব। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।