মৌলভীবাজার: জলজ ফুলের সৌন্দর্য অতুলনীয়। প্রাকৃতিক বিলের ওপর যে ফুলটি প্রস্ফুটিত হয় দূর থেকে তার সৌন্দর্য অনায়াসে দৃষ্টি কাড়ে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক খাল-বিল, পুকুর-জলাশয়ে আপনা থেকেই ফুটে শাপলা ফুল। সেই ফুটন্ত জলজ ফুলের নানা সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। একেকজন একেক চোখের ভালোবাসায়, ভালোলাগায় ফুলটিকে শব্দে-বাক্যে ভরিয়ে তোলেন।
বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন হাওরেও দেখা মেলে ফুলটির। সাদার পাশাপাশি শরতের এ সময়ে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় লাল শাপলা। মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন চা বাগানের স্বচ্ছ জলের লেকে ফুটেছে অজস্র লাল শাপলা, যা চা বাগানের সবুজ টিলার সৌন্দর্যের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক গুণ।
সম্প্রতি মৌলভীবাজারের চা বাগান ভ্রমণে হঠাৎই দেখা যায় চা বাগানের লেকের পানিতে ফুটেছে অসংখ্য লাল শাপলা। পাহাড়ি লেকের নিরিবিলি পরিবেশে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে প্রকৃতির এ অপূর্ব সৃষ্টি। আপন মনে মৌ-কিটের দল কিছুক্ষণ পর পর ওই ফুলের মধু সংগ্রহ করে যাচ্ছে।
লাল শাপলার অপর বাংলা নাম রক্ত কমল। এর ইংরেজি নাম Red Water Lily এবং বৈজ্ঞানিক নাম Nymphaea Pubescens। প্রকৃতির অনবদ্য এক সৌন্দর্য। হাওর-বিলে বা নানা ছোটবড় জলাশয়ের ফুটে থাকা এসব শাপলার রং প্রকৃতির সঙ্গে মিশে নয়নাভিরাম দৃশ্যে যেন একাকার হয়ে থাকে। এছাড়া ভোরবেলায় শাপলা ফুলের পাঁপড়িতে হালকা শিশিরের ছোঁয়া সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়।
স্থানীয়রা জানান, শাপলার সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। এ লেক ও চা বাগান এলাকার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা অনেকেই এখানে ঘুরতে আসেন, শাপলা দেখতে আসেন। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এ লেকে শাপলা ফুল সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায়।
চা বাগান কর্তৃপক্ষ পর্যটন বা ট্যুরিজমকে ‘এলাউ’ করে না বলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ার পরও পর্যটকদের আসা-যাওয়া নেই তেমন। তারপরও চা বাগানের নিরাপত্তাকর্মীর চোখ এড়িয়ে কোনো কোনো প্রকৃতিপ্রেমী জলজ শাপলার সৌন্দর্য দেখতে ছুটে আসেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাদেরই একজন বলেন, শাপলা ফুলের অপরূপ শোভা সৌন্দর্যপিপাসু মানুষকে বিমোহিত করে। এমন সৌন্দর্য মনকে উৎফুল্ল করে তোলে।
পড়ন্ত বিকেলে চা বাগানের লেকে বেড়াতে আসা সুদীপ্তা চৌধুরী বলেন, উঁচু-নিচু চা বাগানের টিলা এবং লেকের মনকাড়া সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। এ লেকটিকে আরও উপযোগী করা যেতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করলে পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে আরও একটি পর্যটক স্পট যোগ হবে।
চা বাগানের বাসিন্দা লছমন হাজরা বলেন, উঁচু-নিচু টিলাভূমিতে যাতায়াত সহজ না হওয়ায় ভ্রমণপিপাসুরা এখানে কম আসেন। এ লেক সৌন্দর্যের দিক থেকে সবাইকে মুগ্ধ করে। কিন্তু আমাদের চা বাগানের বড় সাহেবের নির্দেশ আছে অনুমতি ছাড়া কেউ এখানে প্রবেশ করতে পারবে না। কখনো কেউ প্রবেশ করলেও এখানের চৌকিদারকে (দায়িত্বরত দারোয়ান) বড় সাহেবের গালমন্দ শুনতে হয়।
নাহার চা বাগান ও জুলেখা চা বাগানের ব্যবস্থাপক ইবাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, চা কোম্পানির একটি প্রাইভেট প্রোপার্টি। বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে এটি আমরা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করতে পারবো না। তবে প্রকৃতিবান্ধব ভ্রমণ-পিপাসুরা খুব কম সংখ্যায় চা বাগানের লেকে বেড়াতে এলে আমরা তাদের সাধারণত বাধা দেই না।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২৪
বিবিবি/আরবি