ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মেহেরপুরের ভাষাসৈনিক গোলাম কাউসার চানা আর নেই

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪
মেহেরপুরের ভাষাসৈনিক গোলাম কাউসার চানা আর নেই ভাষাসৈনিক গোলাম কাউসার চানা

মেহেরপুর: মেহেরপুরের ভাষাসৈনিক গোলাম কাউসার চানা (৯৩) মারা গেছেন। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে মেহেরপুর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়ার নিজ বাসভবনে মারা যান তিনি।

তিনি তিন ছেলে, ছয় মেয়ে, নাতি নাতনি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

গোলাম কাউছার চানা মেহেরপুরের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য নাম।

ভাষাসৈনিক গোলাম কাউছারের ছেলে মেহেরপুর প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিএফ মামুন লাকি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তার ছেলে সাংবাদিক জিএফ মামুন লাকি জানান, বয়সের ভারে বাবা দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। এতদিন তাকে মাঝে মধ্যে হাসপাতালে নিতে হত।

৫২-এর ভাষা সৈনিকদের হত্যার বিরুদ্ধে যে কয়জন মেহেরপুরে প্রতিবাদ ও মিছিল করেছিলেন তাদের মধ্যে গোলাম কাওসার চানা অন্যতম। ভাষা আন্দোলনের সময়ে মেহেরপুরে যে ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়েছিল, সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন গোলাম কাউসার চানা এবং সভাপতি ছিলেন মুন্সী সাখাওয়াত হোসেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ সালাম, বরকত, জব্বারদের হত্যার কথা মেহেরপুরে পরের দিন শুনতে পাওয়া যায়। তৎক্ষণাৎ মুন্সী সাখাওয়াত হোসেন ও গোলাম কাউসার চানার নেতৃত্বে ঢাকায় হত্যার প্রতিবাদে মেহেরপুর শহরের রাস্তায় রাস্তায় প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিল। পাক সরকারের ভাষা আন্দোলনের সময়ে তিনি মেহেরপুর উচ্চ ইংরেজি মডেল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।

জানা গেছে, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির ডাকা ধর্মঘট চলাকালে ঢাকায় ছাত্রদের মিছিলে গুলি করা হয়। এ খবর পেয়ে তৎকালীন মেহেরপুর উচ্চ ইংরেজি মডেল স্কুলের হোস্টেলের ছাত্ররা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ওই হোস্টেলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা ২৩ ফেব্রুয়ারি আবুল কালামের সভাপতিত্বে পৌর কালাচাঁদ মেমোরিয়াল হলের সামনে এক সমাবেশ করে। সমাবেশে সরকারের নীতিনির্ধারণের সমালোচনা ও রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে জোরালো বক্তব্য রাখা হয় সমাবেশ থেকে। মুন্সি সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে মেহেরপুর উচ্চ ইংরেজি মডেল স্কুলের মুসলিম হোস্টেলের ছাত্ররা পোস্টারিং, পিকেটিং করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করতে গিয়ে পুলিশের নির্যাতন এমনকি কারাবরণ করতে হয় তৎকালীন উচ্চ ইংরেজি মডেল স্কুলের সাত শিক্ষার্থীকে।  

স্কুলের ছাত্ররা একুশে ফেব্রুয়ারি ক্লাস থেকে বেরিয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল নিয়ে শহরে বের হয়। শিক্ষকরা প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেদিন। ভয়-ভীতি দেখানোর পরও সেই বাঁধার প্রাচীর ভেঙে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন বন্ধ করতে পারেনি। শিক্ষকদের আদেশ অমান্য করে একুশে পালনের অপরাধে প্রয়াত ইসমাইল হোসেন ও নজির হোসেন বিশ্বাসসহ সাতজন ছাত্রকে আটক করে পুলিশ। পরে জামিনে মুক্তি পেলেও স্কুল কমিটির সিদ্ধান্তে তাদের ফোর্স টিসি দেওয়া হয়।

গোলাম কাউসার চানা ১৯৩০ সাল রতনপুর মিশন হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা তিনকড়ি শেখ, মা জয়তুন নেছা। গোলাম কাউসার চানা ৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে রাষ্ট্রের খেতাব পাননি। গোলাম কাউসার চানা রাষ্ট্রীয়ভাবে সেইভাবে মূল্যায়িত না হলেও, প্রতিবছর মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই মহান ভাষা আন্দোলনকারীর হাতে সম্মানসূচক ক্রেস্ট ফুল ও ফল তুলে দিয়েছেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে তিনি মেহেরপুর পৌরসভায় কর আদায়কারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আগামীকাল রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার সময় নামাজে জানাজা শেষে মেহেরপুর পৌর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।