নাটোর: নাটোরের লালপুর উপজেলায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে উপজেলা প্রশাসন। লাইসেন্স না থাকা ও ইট পোড়ানোয় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করায় ইতোমধ্যে তিন ইটভাটাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব ইটভাটায় সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা করেন লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান।
এসময় লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা তৈরি ও ইট পোড়ানো এবং কাঠ ব্যবহার করার অভিযোগে তিনটি ইটভাটাকে জরিমানা করা হয়।
এর মধ্যে লাইসেন্স না থাকা ও ইট পোড়ানোয় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করায় এজিআর ভাটাকে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ৩ লাখ টাকা এবং লাইসেন্স না থাকায় এজিএম ও এজিএস ভাটাকে ১ লাখ টাকা করে মোট ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আইন অমান্য করে উপজেলার পদ্মার চরে এজিআর, এজিএস ও এজিএম নামে ইটভাটা গড়ে তুলে ইট প্রস্তুত করছিলেন মালিকরা। এই অভিযানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এবং স্থানীয় প্রশাসন উপস্থিত ছিলেন।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, অবৈধ ইটভাটার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে এবং শিগগিরই আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে এই ধরনের কার্যক্রম চলমান থাকবে। পরিবেশ বিপন্ন হবে এমন কাজ করতে দেওয়া হবে না।
এদিকে গত ১৭ ডিসেম্বর বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এ সংবাদ প্রকাশিত হয় “ নাটোরের লালপুরে অনুমোদন ছাড়াই প্রতি বছরের মতো এবারও যত্রতত্র গড়ে উঠছে আরও পাঁচ নতুন ইটভাটা। ফসলি জমি, বসতি এলাকা, পদ্মা নদীর চরে গড়ে উঠেছে ইটভাটাগুলো। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমি, হুমকিতে পড়েছে পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং ঝুঁকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। ”এ নিয়ে প্রশাসনের মধ্যে টনক নড়ে। ফলে সংবাদ প্রকাশের পর লালপুর উপজেলায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। অভিযানের প্রথম দিন তিন ইট ভাটাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
জানা যায়, লালপুর উপজেলায় অন্তত ৪৯টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৮ থেকে ১০টি ছাড়া বাকিগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে। এছাড়া এ বছরও আইন অমান্য করে উপজেলার পদ্মার চরে এসএমকে, এজিআর, এজিএস ও চরজাজিরা এলাকায় আরএফএল এবং অমৃতপাড়া এলাকায় এমএসপি নামে পাঁচটি নতুন ভাটা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই অবৈধভাবে এসব ইটভাটার কার্যক্রম চলছে।
এছাড়া গত কয়েক বছর ধরে গড়ে ওঠা প্রায় অর্ধশত ইটভাটাতেও নিম্নমানের কয়লার সঙ্গে কাঠ পুড়িয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা চলছে ইট তৈরির কার্যক্রম। এতে উজাড় হচ্ছে গাছপালা। ভাটার চিমনি দিয়ে বের হওয়া কালো ধোঁয়ার কারণে এ অঞ্চলের জনজীবনসহ গাছ ও কৃষিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ এসব ভাটার কারণে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। কালো ধোঁয়ায় আমের মুকুল নষ্ট হয়ে যায় এবং আমের গুঁটিতে কালো দাগ পড়ে। এছাড়া ওভার লোডে ভাটার মাটি আনা নেওয়ায় রাস্তাঘাটগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। এই দূষিত বাতাস শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে রক্তের মাধ্যমে দেহে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বমি, মাথাব্যথা, বুক ব্যথা, অ্যাজমা, এলার্জি, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, এমনকি ক্যানসারের মতো জটিল রোগের সৃষ্টি হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি।
আর বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) দাবি, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক মদদে নতুন করে ইটভাটা গড়ে উঠছে। এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর মনিটরিংয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আইন থাকলেও নিজ স্বার্থ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সেটা প্রয়োগ করেননি। এ অঞ্চলের পরিবেশ বাঁচাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি।
অন্যদিকে নাটোর পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবি, ২০২২ সালে নাটোরে অফিস স্থাপনের পর থেকে কোনো ইটভাটাকে পরিবেশের ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। যারা অবৈধভাবে ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সেসব ভাটায় দ্রুতই অভিযান চালানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
আরএ