চাঁদপুর: চাঁদপুরের হাইমচর মেঘনা নদীতে সারবাহী এমভি বাখেরাহ জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানের (২৬) সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় চাঁদপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তদন্তকারী কর্মকর্তা নৌ পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক মো. কালাম খান আসামির ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালতের বিচারক মুহাম্মদ ফারহান সাদিক সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) শরীফ মাহমুদ সায়েম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থেকে আকাশকে গ্রেপ্তার করে কুমিল্লা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১১। এতে সহযোগিতা করে র্যাব-৬।
গ্রেপ্তার আকাশ মণ্ডল বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট এলাকার জগদীশ মণ্ডলের ছেলে।
বিকেলে র্যাব-১১ এর একটি দল আকাশকে নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হস্তান্তর করে। সেখান থেকে তাকে কঠোর নিরাপত্তায় র্যাব, নৌ পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে নিয়ে যায়।
এসময় রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট শরীফ মাহমুদ সায়েম, মাসুদ প্রধানীয়া, ইয়াসিন আরাফাত ইকরাম ও মো. শাহজাহান খান। তবে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট শরীফ মাহমুদ সায়েম বলেন, জাহাজে সাত খুন সারা দেশের মধ্যে আলোচিত ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আশা করি, ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের কারণ জানা যাবে।
গত ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর ইশানবালা মাঝেরচর খালের মুখে নোঙর করে রাখা সারবাহী জাহাজ থেকে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় রক্তাক্ত অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুজনের মৃত্যু হয়।
খুন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন-জাহাজের মাস্টার ফরিদপুর সদরের জোয়াইর গ্রামের গোলাম কিবরিয়া (৬৫), তার ভাগনে লস্কর- শেখ সবুজ (৩৫), সুকানি নড়াইলের লোহাগড়ার আমিনুল মুন্সী (৪০), লস্কর মাগুরার মহম্মদপুরের মাজেদুল ইসলাম (১৭), একই এলাকার লস্কর সজিবুল ইসলাম (২৬), ইঞ্জিন চালক নড়াইল লোহাগড়া এলাকার সালাউদ্দিন মোল্লা (৪০) এবং মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানার বাবুর্চি রানা (২০)। এছাড়া আহত সুকানি জুয়েল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগে চিকিৎসাধীন।
জাহাজে হতাহতের ঘটনা তদন্তে শিল্প মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আলাদা কমিটি করা হয়েছে। আর জাহাজ মালিক মাহবুব মোর্শেদ মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে হাইমচর থানায় ৩৯৬/৩৯৭ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন জাহাজের মালিক মাহাবুব মোর্শেদ। মামলা নম্বর (১৭ / ১৬৬)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে আকাশ জানিয়েছেন, আট মাস ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে এমভি আল বাখেরা জাহাজের মাস্টারের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন জাহাজের লস্কর আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান (২৬)। সেই সঙ্গে আকাশসহ জাহাজের সব কর্মচারীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন মাস্টার। এসব কারণে জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়াকে হত্যার ছক কষেন তিনি। কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে মাস্টার ছাড়াও ছয় সহকর্মীদের কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি। আর সুকানিকে কুপিয়ে জখম করেন।
আরও পড়ুন:
জাহাজে ৭ খুন: কর্মী আকাশ মণ্ডল গ্রেপ্তার
জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় মামলা
জাহাজে ‘ডাকাতি নয়’, আলামত দেখে ‘ভিন্ন সন্দেহ’ স্বজনদের
চাঁদপুরে জাহাজে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭
মেঘনায় নোঙর করা জাহাজে মিলল ৫ মরদেহ
আল বাখেরা জাহাজের ৭ শ্রমিক খুন: শিল্প মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
এসআই