চাঁদপুরের মেঘনায় জাহাজে সাত খুনের প্রকৃত ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন, বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন নৌযান শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ১২টার পর থেকে মালবাহী, তেল-গ্যাসবাহী, বালুবাহীসহ সব পণ্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি মো. শাহ আলম এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বাগেরহাটের মূলঘর পূর্ব ইউনিয়নের জগদীশ মণ্ডলের ছেলে আকাশ মণ্ডল এমভি আল-বাখেরা জাহাজের আটজন স্টাফকে ঠান্ডা মাথায় কুপিয়েছেন এবং বিশাল একটি জাহাজ একাই চালিয়েছেন। মনে হয়, এটা তার একার কাজ হতে পারে না। আমরা এই ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন এবং তার সঙ্গে অন্য কারা ছিল, সেটার সঠিক তদন্ত দাবি করছি। ’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা ওই জাহাজে হতাহতের শিকার হয়েছেন সরকারের পক্ষ থেকে জন প্রতি ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতি পূরণ দিতে হবে। তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মবিরতিসহ পণ্যবাহী নৌযান ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। ’
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের এক বিজ্ঞপ্তিতেও কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়।
শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চাঁদপুরের হাইমচরের মাঝেরচর এলাকায় এমভি আল বাখেরা জাহাজে সন্ত্রাসী কায়দায় নির্মম হত্যাকাণ্ডে মাস্টারসহ সাত জন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন, হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার, মৃত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য সরকারিভাবে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা, সব নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ পরিলক্ষিত না হওয়ায় ২৬ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে মালবাহী, তেল-গ্যাসবাহী, বালুবাহীসহ সব ধরনের পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকরা লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করবে। দাবি আদায় না হওয়ায় পর্যন্ত এ কর্মসূচি সফল করতে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানাই।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের দাবির বিষয়ে চাঁদপুর নৌ পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘নৌ পুলিশের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চাঁদপুরে গ্রেপ্তার হওয়া আকাশ মণ্ডলকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার পর নানা তথ্য বের করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। এক বছর আগে আকাশ মণ্ডল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম ইরফান রাখেন। খুনের শিকার জাহাজ মাস্টার গোলাম কিবরিয়ার মাধ্যমে আট মাস আগে তিনি ওই জাহাজে সুকানির চাকরি নেন। ’
এদিকে চাঁদপুর নৌ রুটে সব ধরনের নৌযান নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে স্থানীয় সাধারণ চলাচলকারী লঞ্চযাত্রী ও নৌযান শ্রমিকরা দাবি করছেন।
এ বিষয়ে চাঁদপুর নৌ পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, ‘সাতজনকে হত্যার ঘটনা, ব্যক্তিগত আক্রোশের ঘটনা ছিল। নদীতে কোনো ধরনের নৌযান নিরাপত্তাহীনতায় নেই। এ ছাড়া আমাদের নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ড সব সময় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ’
সারা দেশে ১০ হাজার ছোট পণ্যবাহী নৌযান ও লক্ষাধিক শ্রমিক রয়েছে বলে জানিয়েছে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
এসএএইচ