মাদারীপুর: ছোটবোন পুতুলের বিয়ের আয়োজন চলছে বাড়িতে। ছয় বছর বয়সী সন্তান আব্দুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বাবার বাড়ি মাদারীপুরের ডাসারে ফিরছিলেন অন্তঃসত্ত্বা রেশমা আক্তার (২৮)।
ওদিকে মেয়ে-নাতিদের আসার অপেক্ষায় বাবা মালেক ঘরামিসহ পরিবারের সদস্যরা। এক্সপ্রেসওয়ের মাওয়া টোলপ্লাজায় মোটরসাইকেল থামিয়ে টোল দিচ্ছিলেন স্বামী সুমন মিয়া। ঠিক তখনই যেন আকাশ ভেঙে পড়ে মাথায়। পেছন থেকে একটি বাস দ্রুতগতিতে এসে চাপা দেয় তাদের। ঘটনাস্থলেই পিষ্ট হয়ে যায় শিশু আব্দুল্লাহ। পরে মারা যায় রেশমা আক্তার।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে মাওয়া টোল প্লাজায় ঘটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের তালিকায় যুক্ত হয় রেশমা ও তার ছেলে শিশু আব্দুল্লাহ ও অনাগত সন্তানও। মর্মান্তিক এ খবর পৌঁছালে শোকের ছায়া নেমে এসেছে মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের পুয়ালী গ্রামে। বিয়ে বাড়ির আনন্দ মুহূর্তেই থমকে যায়! শুরু হয় শোকের মাতম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডাসার উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের পুয়ালী গ্রামের মালেক ঘরামির বাড়িতে বিয়ের আয়োজন চলছিল। ছোট মেয়ে পুতুল আক্তারের সঙ্গে পাশেরই মাইজপাড়া গ্রামের জসিম উদ্দিনের বিয়ের আয়োজন চলছিল। বিয়েতে অংশ নিতে মোটরসাইকেলযোগে স্বামী-সন্তানসহ বিয়ে বাড়িতে আসছিলেন রেশমা।
মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে টোল দেওয়ার জন্য তাদের মোটরসাইকেলটি যখন দাঁড়িয়ে ছিল সেই সময় পেছন থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী বাস তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় রেশমার ছেলে আব্দুল্লাহ। পরে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে রেশমাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অনাগত সন্তানসহ মারা যান রেশমা।
রেশমার বোন পুতুল আক্তার বলেন, ‘আমার বিয়ের অনুষ্ঠানে আসছিলেন আমার বোন রেশমা। পথে সব কিছু কেড়ে নিল। তার নিথর দেহ এলো বাড়িতে। আমার ভাগিনাও মারা গেল। আমার বোন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
রেশমার স্বামী সুমন মিয়া বলেন, ‘চোখের পলকে যেন ঘটে গেল সবকিছু। আমার সব শেষ হয়ে গেল! আমি টোলে টাকা দিচ্ছিলাম। ওই সময় পেছন থেকে একটি বাস এসে আমার স্ত্রী ও সন্তানকে চাপা দিয়ে টেনে নিয়ে যায়। আমি চোখের সামনে দেখলেও কিছু করতে পারেনি। আমার পুরো পরিবারকে শেষ করে দিল ঘাতক বাসের চালক! আমি ওদের কঠোর শাস্তি চাই। ’
ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মাহমুদ উল হাসান জানান, মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজার দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ডাসারের দুইজন রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এক নারী ও শিশু। তারা একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে বাড়িতে আসছিলেন।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে ধলেশ্বরী টোল প্লাজা এলাকায় বেলা ১১টার দিকে দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে বেপরোয়া গতির বাসের ধাক্কায় ছয়জন নিহত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪
এসএএইচ