ঢাকা, শনিবার, ২০ পৌষ ১৪৩১, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

নিজেদের বানানো সেতুতে মরা নদীর ভোগান্তির অবসান

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৫
নিজেদের বানানো সেতুতে মরা নদীর ভোগান্তির অবসান

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার নিলখী ইউনিয়নের সরদার মাহমুদের চর গ্রাম। একটি স্রোতহীন (মরা) নদী গ্রামটিকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে অন্যান্য এলাকা থেকে।

যুগ যুগ ধরে এ এলাকা থেকে অন্যান্য এলাকার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র বাহন ছিল খেয়া নৌকা। আর এ নৌকা পারাপারেই যত ভোগান্তি! অবশেষে অবসান হলো দীর্ঘদিনের ভোগান্তি। স্থানীয় প্রবাসীদের অর্থায়নে মরানদীর দীর্ঘপথে নির্মাণ করা হলো কাঠের সেতু! 

বছরের শেষ দিন মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে উদ্বোধন হয়েছে সেতুটি। নতুন বছরের প্রথম দিনে এলাকাবাসীর জন্য কাঠের সেতুটি প্রবাসীদের পক্ষ থেকে এক উপহার!

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার শিবচর এবং ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার সংযোগস্থল প্রত্যন্ত গ্রাম নিলখী ইউনিয়নের সরদার মাহামুদের চর। আড়িয়াল খাঁ মরা নদের ঘাটটির নাম সরদার মাহামুদেরচর খেয়াঘাট। এ ঘাট দিয়েই আশপাশের এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় এ এলাকার মানুষের। হাট-বাজার করতে, উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে এ খেয়াঘাট পার হয়ে যেতে হয় সাধারণ মানুষের। বর্ষা এবং শীত উভয় মৌসুমেই পানি থাকায় সারাবছরই ভোগান্তি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের।

দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর করতে প্রবাসী এবং এলাকাবাসীর যৌথ প্রচেষ্টায় ৬ শত ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কাঠের সেতু সংযোগ স্থাপন করলো দুইপাড়ে! প্রবাসীদের অর্থায়ন এবং এলাকাবাসীদের সার্বিক সহযোগিতায় নির্মিত সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে 'প্রবাসী সেতু' নামে। বাঁশ এবং কাঠ দ্বারা নির্মিত ৬ শত ফুট দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৩ ফুট প্রস্থের সেতুটি তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় ২ মাস। ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ টাকা।

স্থানীয়রা বলেন,'স্থানীয় সুজাত বেপারীর উদ্যোগে প্রবাসীদের অর্থায়নে এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় দীর্ঘতম কাঠের সেতুটি যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। নিলখী ইউনিয়নের সরদার মাহামুদের চর গ্রামটি দুই ভাগে ভাগ করে রেখেছিল নদীটি(মরানদী)। এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার রয়েছে। এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় যেতে নদী পারাপারে চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো। কাঠের এ সেতুটি নির্মাণ করার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান হলো। সেতু উদ্বোধনের সময় এলাকার হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় সেতুটি!

মো. আবজাল হোসাইন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, এখানে একটি ব্রিজ হওয়ার কথা ছিল। যতটুকু শুনেছি প্রকল্পটি বাতিল হয়েছে। এরপর স্থানীয়রা উদ্যোগ নিয়ে কাঠের সেতু নির্মাণ করেছে। এটা নিঃসন্দেহে বড় ধরনের একটি সামাজিক কাজ। এখন এ সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে আমাদের সবার এগিয়ে আসতে হবে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মধ্য দিয়ে অবহেলিত এলাকার উন্নয়ন ঘটে। সেতুর মাধ্যমে দূর হয় নদী পারাপারের ভোগান্তি। সরকারিভাবে সেতু তৈরির আশায় যুগযুগ অপেক্ষার পর নিজেদের সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছেন এলাকাবাসী নিজেরাই। উদ্যোগ নিয়ে গড়ে তুলেছেন কাঠের একটি দীর্ঘ সেতু! আপাতত দুর্ভোগের অবসান হলেও এখানে স্থায়ীভাবে একটি সেতুর প্রত্যাশা গ্রামবাসীর।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৫
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।