ঢাকা: জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা-পুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি।
পুলিশ বলছে, ওই সময়ে সারা দেশে পুলিশের এক হাজার ৭৪টি যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়। এ কারণেই এখন সড়কে টহল দেওয়ার জন্য এবং পুলিশ সদস্যদের আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে যানবাহনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এতে তাদের দায়িত্ব পালনে চ্যালেঞ্জও বেড়েছে।
আন্দোলনের সময়ে পুলিশের যেসব যানবাহনে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, সেসবের মধ্যে রয়েছে জিপ, ডাবল কেবিন পিকআপ, সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, এপিসি, ক্রাইম সিন ভ্যান, ট্রাক, বাস, কার, মোটরসাইকেল, ওয়াটার ক্যানন, প্রিজনার্স ভ্যান ইত্যাদি।
পুলিশ সদরদপ্তর বলছে, ঢাকাসহ দেশের অনেক থানায় যানবাহন সরবরাহ করা হয়েছে। তা এখনো চলমান। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, অভ্যুত্থানের সময়ে পুলিশের অনেক যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পুলিশের যানবাহন সংকট নতুন কিছু নয়। যানবাহন সংকট লেগেই থাকে। এ কারণেই পুলিশ অন্যের যানবাহন ‘রিকুইজিশন’ নেয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি সূত্র জানায়, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ২২টি থানা ও ১৮৬টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৯৭টি গাড়ি পুড়ে গেছে, যেগুলো আর কখনো ব্যবহার করা সম্ভব হবে না।
এমনিতেই থানাগুলোতে প্রায় সময়ই যানবাহন সংকট লেগেই থাকে। একেকটি থানা অনেক বড় জায়গা নিয়ে। পাঁচ-ছয়টি গাড়িতেও হয় না। এ কারণেই অন্যের গাড়ি ‘রিকুইজিশন’ করা হয়। তা ছাড়া ডিএমপির ১৮৬টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে দেওয়া হয়েছে ৬০টি। সংকট রয়েই গেছে।
গত ৯ অক্টোবর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিক, ফাইন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো. শওকত আলী জানান, থানার সক্ষমতা বাড়াতে ও পুলিশের পেট্রলিং কার্যক্রম জোরদার করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ১০টি থানায় নতুন গাড়ি দেওয়া হয়েছে।
গাড়ি হস্তান্তরের আগে তিনি বলেছিলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের গতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য পুলিশের যানবাহনও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিষয়টিকে সামনে রেখে ডিএমপি কমিশনার বহরের ৫০টি নতুন গাড়ি নিজ তহবিল থেকে সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে আমরা ১০টি গাড়ি আমাদের বহরে যুক্ত করছি।
তখন উত্তরা পূর্ব, যাত্রাবাড়ী, গুলশান, তেজগাঁও, কদমতলী, কামরাঙ্গীরচর, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মতিঝিল ও নিউমার্কেট থানায় গাড়ি বিতরণ করা হয়।
৪ জানুয়ারি হাসান মো. শওকত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত সর্বমোট মোট ৬০টি যানবাহন ঢাকার ক্ষতিগ্রস্ত সবগুলো থানায় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি মাহিন্দ্রা এবং ১০টি রানার গাড়ি। আপাতত থানার জন্য যানবাহন কমপ্লিট। প্রয়োজনে এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
কথা হলে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাউদ হোসেন বলেন, জুলাই-আগস্টে খিলগাঁও থানা পুলিশের গাড়িতেও হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ এ সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।
তিনি জানান, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের যানবাহন শাখা থেকে পুরোনো তিনটি গাড়ি খিলগাঁও থানাকে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডিএমপি থেকে একটি নতুন মাহিন্দ্রা গাড়ি দেওয়া হয়েছে। আর আগে থেকেই দুটি ছিল।
এই কর্মকর্তা বলেন, এই ছয়টি গাড়ি নিয়ে আমরা টহল কার্যক্রম চালিয়ে থাকি। যুগ যুগ ধরে পুলিশের যানবাহন সংকট রয়েছে। এ কারণেই গাড়ি ‘রিকুইজিশন’ নেওয়া হয়। এটি এখনো চলমান।
যানবাহন সংকট নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) ইনামুল হক সাগর বাংলানিউজকে বলেন, আন্দোলন চলাকালে ঢাকাসহ সারা দেশে পুলিশের এক হাজার ৭৪টি যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব যানবাহনের মধ্যে রয়েছে জিপ, ডাবল কেবিন পিকআপ, সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, এপিসি, ক্রাইম সিন ভ্যান, ট্রাক, বাস, কার, মোটরসাইকেল, ওয়াটার ক্যানন, প্রিজনার্স ভ্যান ইত্যাদি। তবে টহলের জন্য জন্য থানা পুলিশকে যানবাহন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যানবাহন দেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও প্রাণহানি হয়। এর মধ্যে ৪, ৫ ও ৬ আগস্ট দেশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়িসহ পুলিশের বেশ কিছু স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারা দেশে পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা থানায় আসতে সাহস পাননি। পরে সেনাবাহিনীর পাহারায় ধীরে ধীরে থানার কার্যক্রম চালু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২৫
এজেডএস