ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

শিক্ষার্থীদের ব্যাংকে টাকা জমানো কমেছে

জাফর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৫
শিক্ষার্থীদের ব্যাংকে টাকা জমানো কমেছে ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: ঢাকার আশুলিয়ার স্কুলছাত্র আমিরুল ইসলাম আকাশ বেসরকারি চাকরিজীবী মা-বাবার কাছ থেকে স্কুল খরচের বাইরে কিছু টাকা পায়। আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকেও মাঝে মাঝে উপহার পায়।

হাতখরচের বাইরে যে টাকা থাকে, সেটা তার স্কুল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট জমা রাখে সে। গত কয়েক বছর ধরে এভাবেই সঞ্চয় করছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের এপ্রিলের পর থেকে বাবার খরচ বাড়লে তার জন্য বরাদ্দ কমে যায়। জুনের পর তা কমে যায় আরও।

ব্যাংকে টাকা রাখা কমে গেছে সদ্য স্কুল পেরুনো ঢাকার বাসিন্দা আরমানেরও। ব্যবসায়ী বাবা নানা কারণে আগের মত আর ছেলেকে টাকা দিতে পারেন না। সেজন্য ব্যাংকেও টাকা জমা রাখতে পারছে না সে।

আকাশ বা আরমানের মতো টাকা জমা রাখার এই ভাটা দেখা যাচ্ছে দেশব্যাপী স্কুল ব্যাংকিংয়ের হিসাবে। শুধু তাই নয়, অনেকে উল্টো টাকা তুলে নিয়ে খরচ করছে।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন চিত্র দেখা গেছে।

হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের অক্টোবর নাগাদ ব্যাংকে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জমার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। জুনের তুলনায় যা ২৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা কম। জুন শেষে স্কুল ব্যাংকিংয়ে এসব ক্ষুদে শিক্ষার্থীর জমার পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৩২৫ কোটি টাকা ৫৫ লাখ টাকা।

দেশে মোট শিশু শিক্ষার্থীর ব্যাংক হিসাবের পরিমাণ ৪৩ লাখ ৬৪ হাজার ২৫৯টি। এর মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২ লাখ ৩৮ হাজার ১৩২। আর মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১ লাখ ২৬ হাজার ১২৭।

ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৪ সালজুড়েই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। এ সময় মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত পর্যন্ত মানুষ আয়ের মধ্যে ব্যয় সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছে। ফলে প্রভাব পড়েছে সন্তানদের খরচেও।   

বিভিন্ন পণ্যে ভ্যাট আরোপের ফলে বাজারদর বেড়ে গেলে এর প্রভাব পড়বে মানুষের সংসার খরচে। ফলে তার প্রভাবে স্কুল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্টেও টাকা হ্রাস হতে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্কুল ব্যাংকিংয়ের শুরু
তথ্য বলছে, আগামীর নাগরিককে সঞ্চয়ের অভ্যাস শেখানোর লক্ষ্য নিয়ে ২০১০ সালের ২ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলার লেটারের মাধ্যম স্কুল ব্যাংকিং শুরু হয়। দেশের ৪৮টি ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং করছে।

কেন স্কুল ব্যাংকিং
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল স্কুল ব্যাংকিং। শৈশব থেকেই নাগরিকের সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা ও আধুনিক ব্যাংকিং প্রযুক্তির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচিত করানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল ব্যাংকিং অনুমোদন করে। বাবা-মায়ের কাছ থেকে পাওয়া টাকা, টিফিন থেকে বাঁচানো টাকা, বৃত্তির টাকা, স্বজনদের কাছে থেকে পাওয়া উপহারের টাকা এই হিসাবে জমা রাখবে তারা।

কোন বয়সী শিক্ষার্থী স্কুল ব্যাংকিং করবে
সরকার অনুমোদিত যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৮ বছরের কম বয়সী যে কোনো শিক্ষার্থী ব্যাংকে গিয়ে ১০০ টাকার প্রাথমিক জমা দিয়ে অভিভাবকের সহায়তায় একটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারে। বয়স ১৮ অতিক্রম করলে আজকের শিশুই স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূর্ণাঙ্গ  গ্রাহক হিসাবে লেনদেন শুরু করবে।

এ ধরনের ব্যাংক হিসাব পরিচালনার জন্য কোনো চার্জ/ফি আদায় করা হয় না। বরং আকর্ষণীয় মুনাফা দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় ঋণ পাবেন অভিভাবক
এসব হিসাবের অনুকূলে ব্যাংকে আমানতকারী শিশুদের ছাত্রজীবনে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ের জন্য অভিভাবকের পরিশোধ গ্যারান্টির বিপরীতে ঋণ বিতরণের জন্য ৫০০ কোটি টাকার একটি তহবিলও গঠন করা হয়েছে। পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আওতায় একক নামে শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৫
জেডএ/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।