ঢাকা: ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি বলেছেন, জাপান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক বিশ্বাস এবং বন্ধুত্বের দ্বারা দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) এক শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, গত ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও প্রকৃতির ‘সোনার বাংলা’ নামে পরিচিত এই বাংলাদেশ তার জনগণের হৃদয়ের উষ্ণতায় ভরা একটি সুন্দর দেশ। বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে অবস্থিত এবং ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে সংযোগ স্থাপনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আঞ্চলিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করতে পেরে গর্বিত।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে জাপান বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে আসছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’ এর আওতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
প্রথমত, অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীরতর করা: উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে, জাপান বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বিপাক্ষিক উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে ঢাকা মেট্রোর মতো অবকাঠামো উন্নয়ন করে আসছে, একই সাথে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক উন্নয়ন ক্ষেত্রেও সহযোগিতা জোরদার করা হচ্ছে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে, অনেক জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখার সাথে সাথে, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করার প্রচেষ্টা এখন চলমান। এছাড়াও, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবার পরিপ্রেক্ষিতে, উভয় দেশের সরকার একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) সম্পাদনের জন্য জোরদার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করা: দুই দেশের যুদ্ধজাহাজের শুভেচ্ছা সফর থেকে সামরিক ইউনিটগুলির মধ্যে বিনিময়সহ বিভিন্ন সহযোগিতা কর্মসূচি সক্রিয়ভাবে চলমান। তা ছাড়াও, ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওআইপি )’ এর অধীনে, জাপান সরকার বাংলাদেশকে একটি নতুন সহযোগিতা কাঠামো, ‘অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স (ওএসএ)’ এর আওতায় প্রথম সুবিধাভোগী দেশগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই কাঠামোর অধীনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে পেট্রোল বোট সরবরাহ করা হবে।
তৃতীয়ত, দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, সেটা হোক ব্যবসা, বিদেশে শিক্ষালাভ বা সংস্কৃতি। এই দেশে জাপানি ভাষা এবং সংস্কৃতি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, এবং এর সাথে অনেক তরুণ বাংলাদেশি জাপানে পড়াশোনা অথবা কাজ করার সুযোগ খুঁজছেন।
এই ধরনের বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতামূলক সম্পর্কের বিকাশ উভয় দেশের অনেক মানুষের দৃঢ় প্রচেষ্টার একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন, যার মধ্যে বেসরকারি এবং তৃণমূল পর্যায়ের ব্যক্তিরাও রয়েছেন। আমার পক্ষ থেকে, দুই দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এমন শক্তিশালী একটি বন্ধনের ভিত্তিতে আমি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে চাই, বলেন জাপানের রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, গত গ্রীষ্মে এ দেশে যে রাজনৈতিক অভ্যুত্থান ঘটেছে, তার ফলে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের সামনে এখন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার এক মূল্যবান সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, একটি দেশ পুনর্গঠনের পথ কোনোভাবে মসৃণ হবে না। সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ হয়তো অপেক্ষা করছে। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে, জাপান তাদের সংস্কার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে এবং দৃঢ়ভাবে পাশে থেকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করবে, যাতে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক উত্তরণ ঘটে। এর ফলে স্থিতিশীল উন্নয়নের পথে আবার অগ্রসর হবে। এই নীতি মাথায় রেখে, এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে জাপানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমি আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করব।
তিনি বলেন, জাপানি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জাপানি কূটনৈতিক মিশনগুলির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ । ২০১৬ সালের ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলার ট্র্যাজেডিকে হৃদয়ে রেখে বাংলাদেশে বসবাসকারী জাপানি নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য দূতাবাসের প্রচেষ্টার অগ্রদূত হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করব।
জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, জাপান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক বিশ্বাস এবং বন্ধুত্বের দ্বারা দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ। আপনাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার মাধ্যমে, বাংলাদেশের সাথে এই চমৎকার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব। এই প্রচেষ্টায় আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
টিআর/এমজেএফ