ঢাকা: আওয়ামী দোসরদের প্রার্থী হওয়ায় সাধারণ সদস্যদের অসন্তোষ চরমে। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর সাধারণ সদস্যদের দাবির মুখে গত ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ চারকোল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিসিএমইএ) বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সে সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্টমুক্ত বিসিসিএমইএ গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সাধারণ সদস্যরা। কিন্তু পতিত স্বৈরাচারের দোসর যারা বিগত বছরগুলোতে সাধারণ ব্যবসায়ীদের জিম্মি কওর চারকোল সেক্টর থেকে ফায়দা লুটেছে, এই শিল্পের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করেছে তাদের অনেকেই প্রার্থী হওয়ায় সাধারণ চারকোল ব্যবসায়ীরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে।
সর্বশেষ কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি ও সভাপতি প্রার্থী জয় হোসাইন – যিনি চায়না আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি। যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক, ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর,
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ এ আওয়ামী লীগের দলীয় তহবিলে ১ কোটি টাকার ফান্ড প্রদান করে এবং চায়না থেকে নৌকা প্রতীকের ১০,০০০ ঘড়ি তৈরি করে আওয়ামী লীগের প্রচারণার কাজে প্রদান করেন। শ্রীনগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলার প্রাক্তন চেয়ারম্যান মসিউর রহমান মামুনের অর্থদাতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত। জুলাই বিপ্লবে উত্তরা এলাকায় ছাত্র জনতার আন্দোলন প্রতিহত করতে প্রচুর অর্থের জোগান দেয়।
পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সর্বশেষ চায়না সফরের সঙ্গী হিসেবেও যান জয় হোসাইন। এছাড়া আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়নার সহযোগিতা লাভের চেষ্টা করেন।
এছাড়াসহ-সভাপতি প্রার্থী সায়হাম খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, পাবনা জেলা শাখা। সায়হাম খান পারিবারিক ভাবেই আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। সে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পোস্টে ছিল। সাবেক সহসভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, পাবনা জেলা শাখা। সহ সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা। উপ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ।
আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে এহেন কাজ নাই যা তিনি করেন নাই। পাবনা শহরে তার এবং তার আওয়ামী পোস্টধারী মাদক ব্যবসায়ী মামা আব্দুল আল মামুনের অত্যাচারে সবাই ভীতির মধ্যে থাকতেন।
মামলা, হামলা, খুন, ছিনতাই, রাহাজানি সব কিছুতেই তার সংশ্লিষ্টতা ছিল। ৫ আগস্টে পাবনা দুই ছাত্র হত্যায় তার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। কিন্তু তার শ্বশুর জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় সে এইসব মামলা থেকে অব্যাহতি পায়। তার পরিবারকে পাবনা শহরে মাদক ব্যবসায়ী পরিবার হিসেবেই জানে।
৫ আগস্টের পর তিনি দেশ ত্যাগ করেন। তিনি বর্তমানে দেশের বাইরেই অবস্থান করছেন। এবং কুরিয়ারের মাধ্যমে দুইদিনের মধ্যে নমিনেশন ফরমে সাইন করে জমা দিয়েছেন যেটা নিয়ে সাধারণ সদস্যরা সন্দিহান যে তার সাইন জাল করে কেউ ফরম জমা দিয়েছে।
তিনি অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি পদে নির্বাচন করার জন্য নমিনেশন ফরম কেনার দিন থেকে তার ফেসবুক ডিএকটিভেট করে রেখেছেন। তিনি হাসিনার পতনের পর বিদেশে বসে প্রতিনিয়ত বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সাধারণ সদস্যদেরও ধারণা তিনি নির্বাচনের আগে খুব গোপনে দেশে এসে নির্বাচনে অংশ নেবে।
আরেক সহ সভাপতি প্রার্থী “মুন্সী বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও পলাতক আব্দুর রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে আব্দুর রহমানের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমানের বিভিন্ন কার্যক্রমে তিনি প্রতি নিয়ত অর্থদান করতেন এবং আব্দুর রহমানের নাম ও প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিগত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে প্রতি নিয়ত বিএনপি সমর্থকদের নামে হামলা মামলা দিয়ে আতঙ্কিত করে রাখতেন।
জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে তিনি তখন ফ্যাক্টরিতে নিজে আগুন লাগিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ও বিএনপি জামায়াত আগুন লাগিয়েছে দাবি করে অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানায়। এমন কি তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে অন্য ফ্যাক্টরিতে পাটখড়ি না দিতে ব্যাপারীদের ভয়ভীতি দেখাতেন। মোদ্দা কথায় হিরু মুন্সি ছিল বোয়ালমারী উপজেলায় সব চেয়ে অত্যাচারী ও অর্থ প্রদানকারী আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শরীয়তপুরের এক চারকোল ব্যবসায়ী বলেন, জুলাই বিপ্লবের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করে আওয়ামী দোসরদের আমরা কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেব না। যারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছে এবং যাদের বিরুদ্ধে বিগত জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদের বিপক্ষে অর্থায়নের অভিযোগ আছে তাদের প্রার্থীতা বাতিলের জোর দাবি জানান ফরিদপুর এলাকায় আরেকজন ভোটার ও চারকোল ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২৫
আরএ