ঢাকা: রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসায় কাজের বুয়ার চাকরি নেন মোছা. শেফালী বেগম। পরে ওই বাসার লোকজনকে ঘুমের ওষুধ মেশানো খাবার খাইয়ে চুরি করেন স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ।
কাজে যোগ দিতে তিনি রোখসানা নামে যে পরিচয়পত্রের ফটোকপি ব্যবহার করতেন, সেটি ছিল ভুয়া। কম্পিউটারের দোকান থেকে ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি করে প্রিন্ট করে নেন তিনি। বুয়া হিসেবে বিভিন্ন বাসায় কাজ নিয়ে কৌশলে স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যেতেন তিনি।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য জানান। মঙ্গলবার রাতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকায় অভিযান চালিয়ে শেফালীকে গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।
ধানমন্ডি থানা সূত্রে জানা যায়, ধানমন্ডির ৫/এ সড়কের একটি বাসার গৃহকর্ত্রী কাজের বুয়া খুঁজছিলেন। ১৮ জানুয়ারি ওই বাসায় যোগ দেন শেফালী। দুপুরের রান্না করেন। তখন আবার গৃহকর্ত্রী কেনাকাটার জন্য মার্কেটে যান। বাসায় ছিলেন তার ছেলে ও স্বামী। এই সুযোগে রোখসানা দুপুরের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। সেই খাবার খেয়ে ওই গৃহকর্ত্রীর স্বামী ও ছেলে ঘুমিয়ে পড়েন।
এর মধ্যেই রোখসানা ওরফে শেফালী বেগম বাসার আলমারি ভেঙে নগদ ৬০ হাজার টাকা, ছয়টি স্বর্ণের চুরি, দুটি স্বর্ণের চেইন, একটি কানের দুল, একটি স্বর্ণের লকেট, তিনটি ডায়মন্ডের আংটি, দুটি ডায়মন্ডের কানের রিং ও স্বর্ণের কানের সেটসহ সর্বমোট ৩০ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের মালামাল হাতিয়ে নেন।
এসব মালামাল নিয়ে বিকেলের দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যান। পরে ১৯ জানুয়ারি ওই গৃহকর্ত্রী ধানমন্ডি থানায় একটি চুরির মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নগদ অর্থ ও অন্যান্য মালামাল উদ্ধারসহ শেফালীকে গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। তার কাছ থেকে নগদ তিন লাখ ৪৩ হাজার টাকা, নয়টি মোবাইল ফোন, একটি মুক্তার হার, একটি ভ্যানিটি ব্যাগ ও ব্যাগে রক্ষিত চেতনা নাশক ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
থানা সূত্র আরও জানায়, রোখসানাকে কাজের জন্য নিয়ে আসা বাসার সিকিউরিটি গার্ড শহিদুর রহমানকে গত ১৯ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয়। শহিদুরের দেওয়া তথ্য, বাসা ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং প্রযুক্তির সহায়তায় শেফালী বেগমের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গাজীপুর জেলার টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মোছা. শেফালী বেগম কাজের জন্য রোখসানা নামের যে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দেখাতেন, সেটি ভুয়া। পরিচয়পত্রটি তিনি একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে তৈরি করে প্রিন্ট করে নেন। বিভিন্ন বাসায় কাজে যোগ দেওয়ার সময় তিনি এই পরিচয়পত্রটিই দেখাতেন। আর এই কৌশলেই তিনি চুরি করতেন।
কাজের বুয়ার বেশে চুরি করলেও শেফালী টঙ্গী এলাকায় বিলাসী জীবনযাপন করেন। সেখানে “স্বপ্নবিলাস” নামে তার একটি সমবায় সমিতি রয়েছে, জানায় পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২৫
এজেডএস/আরএইচ