পাবনা: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তৌহীদি জনতাকে কটাক্ষ করে বিভাজনের রেখা টানবেন না।
মঙ্গলবার (১১ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টায় পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে এক বিশাল গণ-সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার কাঁধে যে ভূত সওয়ার হয়েছিল সেই ভূত এখন বাংলাদেশের কারো কারো কাঁধে ভর করেছে। যারা তৌহীদি জনতাকে কটাক্ষ করে বিভাজনের রেখা টানতে চায়, তাদের জানা উচিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর ইসলাম এক সূত্রে গাঁথা। ইসলাম আক্রান্ত হলে স্বাধীনতা বিপন্ন হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ কারো কৃপায় অর্জিত হয়নি। এই বাংলাদেশ কোনো বিশেষ শ্রেণীর আন্দোলনের ফসল নয়। এই বাংলাদেশ আপামর জনতার দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ফসল।
মামুনুল বলেন, আমরা ১৯০ বছর সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। বিশ শতকের গোড়ার দিকে কলকাতার দাদাবাবুদের আধিপত্যবাদী হিন্দুত্ববাদকে খর্ব করেছি। একাত্তরের স্বৈরাচার পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে এই বাংলাদেশ আমরা অর্জন করেছি।
আমাদের লাল সবুজের পতাকায় বারবার শকুনের ছোবল পড়েছে। সর্বশেষ ২০০৮ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত একটি ভিনদেশি অপশক্তির ক্রীতদাসী হিসেবে লেডি ফেরাউন খ্যাত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের সব রকম অধিকার বুটের তলায় পৃষ্ঠ করেছে। দেশটাকে খুনের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি যখনই মানুষ নিজেদের অধিকার ও অভিপ্রায় বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছে তখনই এদেশের মানুষের ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষাকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হাইজ্যাক করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে ইনশাআল্লাহ বলে যে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল, বাহাত্তরের সংবিধান রচনার মাধ্যমে সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছিল। ৭২ এর চেতনাকে একাত্তরের চেতনা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যারাই বাহাত্তরের সংবিধানের বিরুদ্ধে বলেছে তাদেরকেই রাজাকার, পাকিস্তানের দোসর ইত্যাদি বলে কোণঠাসা করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের অংশিজনদেরও হাসিনা রাজাকার বলে সম্বোধন করেছিল।
"আমি কে তুমি কে রাজাকার রাজাকার" ছাত্ররা তখন এই স্লোগানে সারাদেশ উত্তাল করে তোলে। আর এভাবেই হাসিনার বিভাজনের রাজনীতির কবর রচিত হয় ৫ই আগস্ট।
মাওলানা মামুনুল হক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার অবাক লাগে যখন দেখি আপনারা আবারও শেখ হাসিনার রাজনীতি করার স্বপ্ন দেখেন। আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত। বাংলাদেশের ইতিহাসে আরও অনেক নেতা নেত্রী আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন কিন্তু কেউই পালিয়ে যাননি। শেখ হাসিনা পালায় না বলে- পালিয়ে গেছে। মনে রাখবেন, হাসিনা শুধু নিজের ও পরিবারে চিন্তা করেছে। আপনাদের কিংবা আওয়ামী লীগের কথা দুবার ভাবেনি। ভেবেছে পুতুলের কথা। ভেবেছে ছেলে জয়ের কথা। ভেবেছে বোন রেহানার কথা।
হাসিনা জানতো পালাতে হবে। সেই জন্যই স্যুটকেসের পর সুটকেস গুছিয়ে হেলিকপ্টার নিয়ে পালিয়েছে। নিজে পালানোর আগে পরিবারের লোকদের পালিয়ে যেতে বলেছে। আর আপনাদের জনতার রোষানলে ফেলে গেছে।
এ ধরনের কাপুরুষ নেতার অধীনে কোনো আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কর্মী রাজনীতি করতে পারে না।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ভারতের মাটিতে বসে ভারতের প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে পলায়নকারী স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা তৈরি করার জন্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা পরায়ণ বক্তব্য দিচ্ছে। তার বক্তব্যের কারণে নতুন করে আবার বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। এর দায় শেখ হাসিনা আর তার দলের শুধু নয়, বরং রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের ওপরেও বর্তায়। ভারতকে এটা পরিষ্কার করতে হবে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক চায় কিনা।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন।
জেলা আহ্বায়ক মুফতি ওয়ালি উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণ-সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা জহিরুল ইসলাম, যুব মজলিস সভাপতি জাহিদুজ্জামান, খেলাফত ছাত্র মজলিস সভাপতি মুহাম্মাদ কামাল উদ্দীন, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুল্লাহ নাটোরীসহ কেন্দীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫
আরএ