ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

স্বপ্নপুরী থেকে ৪৮টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫
স্বপ্নপুরী থেকে ৪৮টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার  উদ্ধার করা ভালুক

দিনাজপুর: দিনাজপুরের অন্যতম পিকনিক স্পট স্বপ্নপুরীতে অভিযান চালিয়ে ৪৮টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে।  

এসময় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের কোনো বৈধ কাগজ দেখাতে না পারায় স্বপ্নপুরীর মিনি চিড়িয়াখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

 

স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পটটি দিনাজপুর-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক এবং তার চাচা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন পরিচালনা করে আসছিলেন।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সদস্যরা অভিযান শুরু করে। যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।  

অভিযানকালে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সদস্য, দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগ, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযানে ৫টি ভালুক, ৫টি মায়া হরিণ, ১১টি বানর, ১৭টি সাম্বার হরিণ, ৫টি রাজধনেশ, ২টি শজারু, ১টি ভোদর উদ্ধার করা হয়।  

এর আগে চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি পার্কটিতে প্রথমবারের মতো অভিযান পরিচালনা করে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। সেসময় ৭৪টি বন্যপ্রাণী জব্দ করা হয়। এর মধ্যে ২২টি প্রাণীকে বিভিন্ন সরকারি চিড়িয়াখানায় নেওয়া হয়। আর অবশিষ্ট ৫২টি বন্যপ্রাণী স্বপ্নপুরী কর্তৃপক্ষের জিম্মায় রাখা হয়। কিন্তু স্বপ্নপুরী কর্তৃপক্ষ সেসব প্রাণীর পক্ষে কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এই অভিযান পরিচালনা করে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।

জানা গেছে, দিনাজপুর-৬ আসনের (বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট) আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ও তার চাচা দিনাজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার ১৯৮৯ সালে নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ এলাকায় বিশাল জায়গাজুড়ে স্বপ্নপুরী নামক একটি পিকনিক স্পট চালু করেন। পিকনিক স্পটটি চালুর পর থেকেই নানাভাবে বিতর্কের মুখে পড়েন চাচা ও ভাতিজা। স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আদিবাসীদের বসবাসের জায়গা, কবরস্থান ও বন বিভাগের জায়গা দখল করে পিকনিক স্পটটি গড়ে ওঠে। পাশাপাশি পিকনিক স্পটের ভেতরে অবৈধভাবে পশু সংরক্ষণ করে মিনি চিড়িয়াখানা গড়ে তোলেন। আর সেই মিনি চিড়িয়াখানায় টিকিটের বিনিময়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে হয়।  

চাচা জাতীয় পার্টি ও ভাতিজা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হওয়ায় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। তবে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক এমপি শিবলী সাদিক দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। এরপর থেকে স্বপ্নপুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নবাবগঞ্জ প্রশাসন ও বন বিভাগ তোড়জোড় শুরু করে।  

বন্যপ্রাণী উদ্ধারের বিষয়ে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট ও জেলা বন বিভাগের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।  

তবে অভিযানে থাকা নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী অনুমোদনহীনভাবে বন্যপ্রাণী সংগ্রহ, প্রদর্শন ও সংরক্ষণ করা দণ্ডনীয় অপরাধ। বন অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসারে, উদ্ধারকৃত প্রাণীগুলোকে যথাযথ পুনর্বাসনের জন্য গাজীপুর ও ডুলাহাজরা সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে হস্তান্তর করা হবে। স্বপ্নপুরী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

বন অধিদপ্তর সব অবৈধ মিনি চিড়িয়াখানা বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে, কোথাও যদি বন্যপ্রাণী অবৈধভাবে আটকে রাখার তথ্য থাকে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ বন বিভাগ বা বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটকে জানানোর জন্য অনুরোধও জানান ওই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।