ঢাকা: কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য সরকারকে সময় দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশীদ বলেছেন, সংস্কার না হলে আমরা কোন তিমিরে থাকবো সেটা ভাবুন।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দশম কার্য-অধিবেশন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
শারমীন এস মুরশীদ বলেন, আপনারা সবাই জানেন কিসের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা এখানে এসেছি। একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গা থেকে আমরা আলোর দিকে ধাবিত হচ্ছি। সেই জায়গায় যদি সমাজের যারা আছেন, তারা ধৈর্য ধরে একসঙ্গে মিলে সংস্কারের পথটা তৈরি না করি, তাহলে এর ভিত্তিতে আমরা নির্বাচন, সংস্কার যাই করি না কেন সবই কিন্তু অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। প্রতিটি কাজের যুক্তির জায়গা থেকে, বিজ্ঞানের জায়গা থেকে একটি ন্যূনতম সময় না পেলে সেটি করা যায় না। সেই জায়গা থেকে সরকারকে সময়টুকু দিতে হবে। সেটা যদি দেওয়া যায়, তাহলে কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কার হবে। আর যদি না দেওয়া যায়, সেটা যদি রাজনৈতিক কারণে না হয়, তাহলে সেটার দায় রাজনীতিতে যারা আছেন তাদের নিতে হবে এবং আমাদেরও নিতে হবে। কারণ সংস্কার তো হবে না। আর সংস্কার যদি না হয়, তাহলে আমরা কোন তিমিরে থাকবো সেটা আপনারা ভাবুন।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আত্মহত্যা, নারীদের মাদকাসক্তি ও বাল্যবিয়ের হার বেড়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এবারের ডিসি সম্মেলনে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উঠে এসেছে সেটি হলো, দেশের কিছু এলাকায় আত্মহত্যার হার বেড়েছে। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের মাদকাসক্তির পরিমাণ বেড়েছে। এমনকি বাল্যবিয়েও বেড়েছে, যাতে করে সাংসারিক সংকট তীব্র হয়েছে।
তিনি বলেন, সমাজসেবায় বাৎসরিক যে অর্থমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, সে অনুযায়ী আমরা সেবা দিতে পারি না। এর অন্যতম কারণ বাজেট সংকট। ডিসিরা যেসব দাবি দিয়েছেন, তাতে বোঝা যায় যে আমাদের ঘাটতি আছে। এ ঘাটতি পূরণে কিছু উদ্যোগ নেওয়ার কথা হয়েছে। আর এসব সমস্যা সমাধানে আরও প্রয়োজন এভিডেন্সমূলক তথ্য। গবেষণার চর্চা না থাকায় গবেষণা লুব্ধ তথ্য আমাদের কাছে কম রয়েছে। কারণ আত্মহত্যাগুলো যে হচ্ছে, কেন হচ্ছে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট গবেষণা নেই। সুতরাং এসব বিষয় নিয়ে কাজ করার কথা সম্মেলনে উঠেছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ১৮ বছরের পর শিশুদের কর্মমুখী করার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। যারা এতিম, কিন্তু পড়াশোনা করতে চায়, সে সুযোগটা করে দেওয়া। তাদের তো ঝুঁকির মধ্যে ছেড়ে দেওয়া যায় না। তাদের দক্ষ করে তোলাই হবে আমাদের কাজ।
তিনি বলেন, দুটো কাঠামোগত পরিবর্তনের কথাও এসেছে। পর্যবেক্ষণ মনিটরিংয়ের কাঠামো পরিবর্তন করা হবে। কারণ মনিটরিংয়ে আমাদের বেশ ঘাটতি আছে। যেকোনো প্রজেক্ট নিবিড় মনিটরিংয়ে না থাকলে তা সফল হয় না। আরেকটা বিষয় হলো গবেষণা ও ডকুমেন্টেশন। এ খাতটাকেও আমরা শক্ত করবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটি নিজস্ব মূল্যায়ন করবো, নিজস্ব ম্যাপিং করবো। আমাদের রিসোর্স কি আছে, আমাদের অ্যাসেট কি আছে, মানবসম্পদ কি আছে এ সবকিছুই মূল্যায়ন করে নতুনভাবে দেখবো, কোথায় এটাকে শক্ত করা দরকার, কোথায় রিভিউ করা দরকার।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা সামাজিকভাবে উপকারভোগীদের যে ভাতাটা দেই, যে সেবাটা দেই, এর ৪৬ শতাংশ ত্রুটিপূর্ণ। অর্থাৎ, ১০০ জনের মধ্যে ৪৬ জন ভুল মানুষের কাছে টাকাটা চলে যাচ্ছে। এটা কিন্তু বিশাল অংকের অপচয় এবং যে মানুষটা সুবিধাটা পাওয়ার কথা সে কষ্টে থেকে যায়। আমাদের সংস্কার কমিশনগুলোও তাদের গবেষণা থেকে একই কথা বলেছে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা উপকারভোগীদের যে তালিকা অতীত থেকে পেয়েছি, সেখানে প্রচুর ত্রুটি আছে। ডিসিরাও আমাদের সেই কথা বলেছেন। সেই জায়গা থেকে আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, স্যোশাল রেজিস্ট্রেশনটা আমরা নতুনভাবে করতে যাচ্ছি। আমরা টেকনোলজি ব্যবহার করে এবার রেজিস্টেশনটা করবো। আমরা চাই খুব দ্রুত এই ত্রুটিগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে। যেনো আমাদের কষ্টের টাকাগুলো ঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫
এসসি/আরআইএস