ঢাকা: শিল্পকলা একাডেমি থেকে পদত্যাগের পর সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। তার অভিযোগ, কোনো এক প্রকল্পের জন্য চিঠি ছাড়াই শিল্পকলা একাডেমি থেকে টাকা চেয়েছেন ফারুকী।
তবে এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ও নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। দীর্ঘ বক্তব্যে তিনি বলেছেন, উনার বলা অনেকগুলো কথা পুরো সত্য নয়, অনেকগুলো কথা ডাহা মিথ্যা এবং কিছু কথা পরিস্থিতি ডিল না করতে পারাজনিত হতাশা থেকে বের হয়ে আসা বলে মনে হচ্ছে।
ফারুকী লেখেন, সৈয়দ জামিল আহমেদের কাজের একজন গুণমুগ্ধ আমি। সম্ভবত উনার কাজ নিয়ে বাংলাদেশে কোনো পত্রিকায় ছাপা হওয়া সবচেয়ে বিস্তারিত লেখাটা আমি লিখেছিলাম যায় যায় দিনের এন্টারটেইনমেন্ট ম্যাগাজিন মৌচাকে ঢিলের জন্য। এরপরেও বাংলা-ইংরেজি অনেক কাগজে লিখেছি। এখনও আমি তাকে বাংলাদেশের থিয়েটারের সবচেয়ে মেধাবী নির্দেশক মনে করি। কয়দিন আগেও জামিল আহমেদের সামনেই একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেছি উনাকে দিয়ে তাদের দেশে একটা থিয়েটার প্রোডাকশন করাতে। কিন্তু ভালো শিল্পী হওয়া আর আমলাতন্ত্রকে কনফিডেন্সে নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো দুইটা দুইরকম আর্ট। দ্বিতীয় কাজটা করবার জন্য লাগে ধৈর্য এবং ম্যানেজারিয়াল ক্যাপাসিটি। কলিগদের বুলিং না করে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা দিয়ে অনেক কাজ আদায় করে নেওয়া যায়। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলে যে কম্পোজার লাগে, সেটার সাথে কোনো একটা থিয়েটার দলে নির্দেশনা দেওয়ার টেম্পারমেন্ট এক না। আমার ফিল্ম ইউনিটে আমি যা করতে পারি, একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানে আমি তা করতে পারি না।
আমি জামিল ভাইয়ের নাটকীয় পদত্যাগ নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম না কারণ তাতে আমাকে এমন কিছু রেফারেন্স টানতে হবে যেটা তার জন্য অস্বস্তিকর হবে। আমি চাচ্ছিলাম না কারণ আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু ফর রেকর্ডস আমাকে আসলে এগুলো বলতেই হবে। আজকে আমাদের অনেকগুলো কাজ আছে। এটা শেষ করে সময় পেলে লিখবো।
শুধু এইটুকু আপাতত বলে রাখি উনার বলা অনেকগুলো কথা পুরো সত্য নয়, অনেকগুলো কথা ডাহা মিথ্যা এবং কিছু কথা পরিস্থিতি ডিল না করতে পারাজনিত হতাশা থেকে বের হয়ে আসা বলে মনে হচ্ছে। আমার বিস্তারিত লেখা হয়তো উনাকে বিব্রত করতে পারে। কিন্তু আমাকে আপনি এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন যেখানে আমাকে বিব্রতকর হলেও সত্য বলতে হবে, জামিল ভাই।
পরিশেষে আমি উনার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করি। উনার সৃজনশীল কাজে যেকোনোভাবে সহযোগিতা করতে পারলে মন্ত্রণালয় ধন্য হবে। আর আমি আমার দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়ার পরও তার কোনো সাহায্যে আসলে আনন্দিত হবো, যদিও আমাদের দুইজনের কাজের ক্ষেত্র আলাদা।
শুক্রবার মুনীর চৌধুরী প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে নিজের পদত্যাগের বিষয়টি উল্লেখ করেন জামিল আহমেদ। অনুষ্ঠানের মঞ্চে থাকা শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব।
পরে অনুষ্ঠান শেষে সেখানেই তিনি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। সেই মুহূর্তের একটি ভিডিওতে জামিল আহমেদকে বলতে শোনা যায়- ‘কোনোরকম চিঠি ছাড়া শিল্পকলা একাডেমি থেকে তাকে টাকা দিতে হবে! কারণ তার খুব দরকার। তিনি একটা প্রজেক্ট করছেন। সেই প্রজেক্টে আমি বলছি ‘না’। তিনি এখানে টাকা-পয়সা কোনো উলটাপালটা হোক…, কিন্তু আমাকে কোনো চিঠি ছাড়া, কোনো চিঠি ছাড়া কেমন করে তিনি চান টাকা; যখন উপদেষ্টা এবং আমি যখন বলেছি- না, আমাকে চিঠি দেন। চিঠি ছাড়া অবশ্যই আমি টাকা দেব না তাকে। আমি কোনো টাকা এখানে ছাড় করব না। তিনি তখন আমাকে বলেন, আপনাকে শ্রদ্ধা করেছি অনেক। আর করব না।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর সৈয়দ জামিল আহমেদকে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক করে সরকার। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালানোর পর ১২ আগস্ট বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ ছাড়েন লিয়াকত আলী লাকী। টানা ১৩ বছর পর তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, মার্চ ০১,২০২৫
এএটি/এজে